চুক্তি শেষ হওয়া সত্ত্বেও বিআইসিসি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সার্ভিস
ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়া এবং বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিএসএল)।
বিএসএল এর কাছে ভাড়া হিসেবে ৩৯১ কোটি টাকা পাওনা আছে বিআইসিসির মালিক পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের (পিডব্লিউডি)।
চলতি বছরের জুন মাসে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পিডব্লিউডি একটি চিঠি পাঠিয়ে বিএসএলের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার এবং ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বকেয়া পরিশোধের সুপারিশ করেছিল।
জুন মাসে ইজারার মেয়াদ শেষে যখন কোন নতুন অপারেটর নিয়োগ করা হয়নি, তখন বিএসএল এবং পিডব্লিউডি সম্মত হয়েছিল যে এই বিষয়ে একটি টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিআইসিসি পরিচালনা চালিয়ে যাবে বিএসএল।
শর্ত ছিল, বিআইসিসি থেকে অর্জিত রাজস্বের মাত্র ২০ শতাংশ দিয়ে বিএসএল-কে বিআইসিসি চালাতে হবে, অন্যদিকে পিডব্লিউডি পাবে বাকি ৮০ শতাংশ।
২০১২ সালে পিডব্লিউডি-এর সাথে স্বাক্ষরিত ১০ বছরের চুক্তির অধীনে বিআইসিসি পরিচালনা থেকে অর্জিত রাজস্বের শতভাগই পেয়েছে বিএসএল।
সূত্র জানায়, নতুন ব্যবস্থার ফলে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিএসএল-এর অর্জিত রাজস্ব কমবে।
বিএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতিকুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নতুন চুক্তি বা আগেরটির সময় বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড এখনও বিআইসিসির দায়িত্বে রয়েছে। নতুন টেন্ডার না হওয়া পর্যন্ত এটি সম্মেলন কেন্দ্রের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।"
পিডব্লিউডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে বিআইসিসি লিজ নেওয়ার পর বিএসএল প্রথম তিন বছরের জন্য সম্পূর্ণ ভাড়া এবং চতুর্থ বছরের জন্য আংশিক ভাড়া পরিশোধ করে। কিন্তু এরপর ছয় বছরের বেশি সময় ধরে তারা কোনো টাকাই পরিশোধ করেনি।
এখন পর্যন্ত বিএসএল পিডব্লিউডি-কে ১১৭.৫০ কোটি টাকা দিয়েছে।
বিএসএল সূত্র জানায়, লিজ নেওয়ার পর কোম্পানিটি বিআইসিসি থেকে ভালো আয় করছিল, কিন্তু পরে তা কমে যায়। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কনভেনশন সেন্টার থেকে রাজস্ব ব্যাপকভাবে কমে গেছে, বরং লোকসান বাড়ছে।
২০১৭ অর্থবছর থেকে ২০২১ অর্থবছর পর্যন্ত, বিআইসিসি পরিচালনা থেকে প্রায় ১৬১ কোটি টাকা আয় করেছে বিএসএল।
কোম্পানিটি এই ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২১ অর্থবছরে মোট ৯২ কোটি টাকা লোকসান করেছে। ২০২০ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৪.৭৫ কোটি টাকা লাভ করে।
বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড ১৯৮৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
দেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা পরিচালনা করে তারা।
এছাড়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বলাকা এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জ এবং অন্যান্য দুটি কমপ্লেক্স পরিচালনা করে বিএসএল।
২০২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিএসএল-এর আয় বেড়েছে ৭৭.৪৫ কোটি টাকা। ২০২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৩৬.৬৬ কোটি টাকা থেকে ১১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবারের আয়।
রাজস্ব বৃদ্ধি সত্ত্বেও, বিএসএল ওই সময়ে ৭৪.৮৭ কোটি টাকা লোকসান করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তাদের লোকসান ছিল ৮১.৮০ কোটি টাকা।