বোরো ধানচাষিদের ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার
জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ধান চাষের খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বোরো মৌসুমে ডিজেলে কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি সরকার চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'বর্তমানে ডিজেলের দাম অনেক বেশি। এতে বোরো মৌসুমে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। আমরা সারে যেমন ভর্তুকি দেই, তেমনি বোরোতে প্রয়োজনে ডিজেলে ভর্তুকি দেয়া হবে।'
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে 'খাদ্য নিরাপত্তায় ভূগর্ভস্থ পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা' শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের উপর কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট অভ ওয়াটার মডেলিং এ কর্মশালার আয়োজন করে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বোরো মৌসুমে কৃষকের খরচের বোঝা বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, 'এখন বৃষ্টির মৌসুম। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বৃষ্টি হওয়ার কথা, কিন্তু হচ্ছে না—এটাই আমাদের জন্যে কনসার্ন। প্রত্যেকদিনই আমরা ভাবছি বৃষ্টি হবে, কিন্তু হচ্ছে না। বৃষ্টি না হলে হয়তো আমনের উৎপাদন কম হবে।'
মন্ত্রী আরও বলেন, আমনের টাকা দিয়ে কৃষকেরা অনেক সময় বোরোতে বিনিয়োগ করেন। সার, ডিজেল কিনে ও সেচ খরচসহ অন্যান্য খরচ মেটান।
'কাজেই বৃষ্টি না হওয়ার জন্য আমন উৎপাদন ব্যাহত হলে কৃষকের উপর এর প্রভাব পড়বে,' বলেন তিনি।
৩ জেলায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে
কর্মশালায় উপস্থাপিত সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের তিনটি জেলা—নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সেচের জন্য ব্যবহারযোগ্য পানি, বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ পানির টেকসই মাত্রা নির্ধারণ ও পানি ব্যবহারের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নারী ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রভাব মূল্যায়নের জন্য গবেষণাটি কএ হয়েছিল।
গবেষণায় ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, নদীর উজানে নিয়ন্ত্রণ, ফসলের ধরনে পরিবর্তন, জলাভূমির অবক্ষয়, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ হ্রাস, ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন ইত্যাদি।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু অঞ্চলে গত এক দশকে বোরো ধান চাষের সম্প্রসারণ মন্থর বা বন্ধ হয়ে গেছে। ওইসব অঞ্চলে আউশ ধান চাষ বেড়েছে।
বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে গত ১০ বছরে নতুন কোনো এলাকায় বোরো ধান চাষ বাড়েনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এক কেজি বোরো উৎপাদনে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন বলে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে।
গবেষণার তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ সালে প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে মাত্র ৬৬১ লিটার এবং ২০১৬-১৭ সালে প্রতি কেজি বোরো উতপাদনে ৫৮৪ লিটার পানি ব্যবহার করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোরো ধান উৎপাদনে ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। দূষিত অঞ্চলে সেচ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি, ফলে ওই সব অঞ্চলে উৎপাদন কম হয় এবং কৃষকদের মুনাফা কমে যায়।