চলতি বছর ৩য় দফা বৃষ্টিতে আবারও বন্যার আশঙ্কা সিলেটে
চলতি বছরে দ্বিতীয় দফা বৃষ্টির পর আবারও এ মাসে বৃষ্টিপাত হচ্ছে সিলেটে। সিলেটের উজানের ভারতীয় রাজ্যগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ঢল নামছে। ফলে আবারও বন্যার আতঙ্কে আছে সিলেটবাসী।
সোমবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর জলমগ্ন হয়ে পরে প্রায় পুরো নগর।
জলে ভাসা এ নগরের বাসিন্দাদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভােগে। রোববার মধ্যরাত থেকে প্রবল বৃষ্টি হয় সিলেটে। সোমবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। এ বৃষ্টিতে সোমবার সকালে তলিয়ে যায় নগরের বেশিরভাগ সড়ক। অনেকের বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে। তবে দুপুরের দিকে পানি নেমে যেতে শুরু করে।
কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই নগর তলিয়ে যাওয়ায় নগরবাসী দায়ী করছেন সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও খামখেয়ালিকে। তবে নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টির কারণে এমনটি ঘটছে। সেপ্টেম্বরে এমন বৃষ্টিপাতকে অস্বাভাবিক বলছেন তারা।
সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টিতে নগরের লামাবাজার, মিরেরময়দান, শিবগঞ্জ, সেনপাড়া, সোনাপাড়া, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, কাজলশাহ, লালাদীঘির পাড়, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, তেররতন, তালতলা, সোবহানীঘাট, যতরপুর, দরগাহ মহল্লা এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন সড়কে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে। উপশগর, দরগাহ মহল্লা, সোবহানীঘাটসহ বিভিন্ন পাড়া–মহল্লার বাসাবাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। পানি ঢুকে যায় দোকানপাটেও।
জলাবদ্ধতা দেখা দেয় সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরেও। এতে রোগী ও তাদের স্বজনদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক আছে এখনও। তবে মেডিকেল কলেজের ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে গতরাতের কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এতে বন্ধ আছে কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা। এছাড়া সেবা নিতে আসা রোগীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মঈনুল হক বলেন, কলেজের আঙ্গিনায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় আজকের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।
নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পায়রা এলাকার বাসিন্দা রাজীব চৌধুরী সোমবার সকালে বলেন, মধ্যরাতে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পায়রা এলাকায় রাত থেকেই পানি জমে। আমারসহ অনেকের বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি ওঠে। রাতভর স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে ছিলেন।
তিনি বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই পায়রা এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অথচ এর কোনো সমাধান সিটি করপোরেশন করছে না। এ অবস্থায় মানুষের ভোগান্তি দূর হচ্ছে না।
নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের লালাদীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা সুবল সিংহ বলেন, গতকাল রাত দুইটার দিকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে লালাদীঘির পাড় সড়ক ডুবে গেছে। এলাকায় নিচু নিচু কিছু ঘরে পানি ভেতরে প্রবেশ করে। এখনও অনেক বাসায় পানি জমে আছে।
এর আগে গত ১৭ জুলাই মাত্র দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছিলো পুরো নগর।
এ প্রসঙ্গে লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান স্থপতি রাজন দাশ বলেন, 'নগরের ড্রেনগুলো খুব সরু আকারে নির্মাণ করা হয়েছে, ছড়াগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি কাটতে পারছে না।'
ছড়া উদ্ধার ও ড্রেন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, 'এ খাতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কী কাজ হয়েছে তা প্রকাশ করা দরকার। কেন এত প্রকল্পের পরও এভাবে পানি জমে যাচ্ছে তা জানা দরকার।'
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, 'নগরে পানি ঘণ্টা দুয়েক ছিলো। এরপর নেমে গেছে। পানি নামার জন্য এইটুকু সময় দিতে হবে।'
রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'সেপ্টেম্বরে এই পরিমান বৃষ্টিপাত অবিশ্বাস্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন হচ্ছে। তাছাড়া হাওর ও নদী ভরাট হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে টিলা থেকে বালু নেমেও ড্রেন ও ছড়া ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানি নামবে কোন দিক দিয়ে।'
জলাবদ্ধতার জন্য নগরবাসীরও দায় আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নগরবাসী সব ধরনের ময়লা আবর্জনা, পলিথিন ড্রেনে ফেলে দেন। এতে ড্রেন ভরাট হয়ে যায়।
নিজেদেরও ব্যর্থতার বিষয়ে তিনি তিনি বলেন, 'ড্রেনের পানি নামার মুখগুলো হয়তো আমরা সবসময় তদারকি করতে পারি না। পানি নামার লিংকগুলোও সবসময় তদারকি করা হয় না। ফলে দোষ সবারই আছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। এরফলে এই ধরনের দুর্যোগ আমাদের সকলকে পোহাতে হবে।'
এর আগে গত জুলাইয়ের জলবদ্ধতার পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জলবদ্ধতার ৪ টি কারণ চিহ্নিত করেছিলেন। মেয়রের ভাষ্য অনুযায়ী জলাবদ্ধতার কারণগুলো হলো, অল্প সময়ে অতিবৃষ্টি, নগরবাসীর যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা, ঢলে টিলা ধসে ছড়া ও ড্রেন ভরাট এবং সময়মতো ড্রেন-ছড়া পরিষ্কার না করা।
নগরবাসীর অভিযোগ কারণ চিহ্নিতের পরও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন। ফলে আবারও জলে ভাসলো সিলেট নগর।