প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফর ছিল অন্যতম সফল: শাহরিয়ার আলম
'প্রধানমন্ত্রীর ভারতের এই সফরে ৩৩ দফার একটি যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে সাতটি সমঝোতার উল্লেখ আছে, ছয়টি প্রকল্পের উদ্বোধন কিংবা কন্সট্রাকশন শুরু অথবা কোন পর্যায়ে আছে সেটি দুই জাতিকে অবহিত করা হয়েছে। আমার দেখা সফরগুলোর মধ্যে অত্যন্ত সফলতম সফর ছিল এবারের ভারত সফর', এমন মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত 'প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক অগ্নি রায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ আমেনা মহসিন, টাইমস অব ইন্ডিয়ার সহকারী সম্পাদক মহুয়া চট্টোপাধ্যায়, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ, টেলিগ্রাফের সাংবাদিক দেবদীপ পুরোহিত, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এবং দ্য হিন্দু পত্রিকার প্রতিবেদক কল্লোল ভট্টাচার্য।
শাহরিয়ার আলম বলেন, 'এই সফরের প্রেক্ষিতে আমি মনে করি না চাওয়া-পাওয়ার কথা একেবারেই বাদ দিয়ে দিতে হবে। একটি সফরে কেউ কম পাবে, কেউ বেশি পাবে। এখানে বাংলাদেশ অবশ্যই একটি পর্যায়ে এসেছে যেটি সে ডিজার্ভ করে। বাংলাদেশ অর্থনীতির জায়গা থেকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।'
আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেলে আমরা পৌঁছাইনি তবে সে পথে হাঁটছি। আমাকে যদি বলা হয় রোল মডেল কোথায়, আমি তাহলে বলবো ইউরোপীয় ইউনিয়নে এটা আমি দেখি। সাউথ এশিয়ার কনটেক্সটে অবশ্যই আমরা রোল মডেল, তবে গ্লোবাল প্রেক্ষাপটে আমাদের আরও এগোতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি ভারতের একটি পরিবর্তন দেখেছি, আগে তারা সবকিছুতে পাকিস্তানকে ফোকাস করতো, এখন অনেকাংশে বাংলাদেশ ফোকাস পাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নটা ভারতের নজরেও পড়েছে, আমরা এখন মাথাপিছু আয়ে ভারতের কাছাকাছি আছি। এখন ভারত- আরও বেশি অবদান রাখতে পারে যেমন পাসপোর্ট, ভিসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি। আমরা ভারতের থেকে কোন সহায়তা পেতে কার্পণ্য করবো না, আমরা ভারত থেকে আরও বেশি ট্রানজিট চাই, বিদ্যুৎ চাই।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের সম্পর্ক দেখছি। ১৯৭২ এর ১৯ মার্চ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন সেটাতে যদি আমরা ফিরে যেতে পারি, দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানির ব্যবস্থা করা। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন সহযোগিতার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোর মধ্যে এটা অন্তর্ভুক্ত। এটাকে সামনে রেখে আমাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হওয়া উচিত।'
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এমন একটি জায়গায় চলে গেছে যেটিকে আমি এখন মনে করি যে 'চাওয়া-পাওয়ার' মধ্যে নেই। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যখন বৈঠক হয় তখন সব বিষয় আলোচনায় আসে। এবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক। তারা একান্তে প্রায় আধঘণ্টা বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি দুজন আরও এক ঘণ্টা মধ্যাহ্নভোজে আলোচনা করেছেন। একটি গ্লোবাল পারস্পেক্টিভে আমরা এই সফরটিকে দেখতে চাই।
এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, 'টিপাইমুখ বাঁধ আমাদের জন্য কত উপকারি সেটা আমি অধ্যাপক আইনুন নিশাতের শিক্ষার্থী হিসেবে জেনেছি। ওখানে একটা বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সারা বছর নিরবচ্ছিন্ন পানির প্রবাহ ধরে রাখা সম্ভব ছিল। বাই প্রডাক্ট বিদ্যুৎ পেতাম। বাংলাদেশ সেখানে সর্বোচ্চ শর্ত দিতে পারতো ওখান থেকে কোনো পানি ডাউনস্ট্রিমে ভারত উইড্রো করবে না। আমরা না বুঝেই টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে নেমে গেলাম।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, 'আমার কাছে এই সফরের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক মনে হয়েছে কানেক্টিভিটির জায়গা। এই জায়গা ভীষণভাবে ফোকাসড ছিল। বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছে, এখন বাংলাদেশ তা কতটুকু কাজে লাগাতে পারে তা দেখার বিষয়।'