৭,১৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ
আঞ্চলিক সংযোগকে গুরুত্ব দিয়ে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ৭,১৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারত ২,৮১০ কোটি টাকা ঋণ দেবে।
সভা শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতসহ প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পটি ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নাধীন আশুগঞ্জ নদীবন্দর ও আখাউড়া স্থলবন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে।
এছাড়া ঢাকা থেকে সিলেট এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের যোগাযোগ আরো সহজ হবে বলে উল্লেখ করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী ভারত, ভুটান, নেপাল এবং পূর্ব প্রান্তে মিয়ানমার ও চীনের কুনমিং শহরের অবস্থান। এই অঞ্চলে বাংলাদেশের সড়কপথে পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিশাল সুযোগ রয়েছে।
ট্রান্সফার ইনফ্রাসট্রাকচার অ্যান্ড লজিস্টিক স্ট্যাডি (বিটিআইএলএস) নামের ওই সমীক্ষায় ভারতসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে আটটি করিডোর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়। প্রস্তাবিত এই মহাসড়কটি অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে।
এই প্রকল্প সহ একনেকে ৮,৭৩০ টাকা ব্যয়ের মোট ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
একনেক সভায় চট্টগ্রামের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বাস্তবায়ন কাজ শুরু হওয়ার পাঁচ বছর পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা পরিবর্তন করে প্রকল্পটির সংশোধন এবং সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর অর্থাৎ ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ প্রথমে ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ করার লক্ষ্য ছিল। পরে আরো এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় ১০৪৮ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪২৯৯ কোটি টাকা করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৭০% কাজ শেষ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, পুরনো নকশায় কাজ করা হলে র্যাম্প, অ্যালাইনমেন্টসহ বেশ কিছু সমস্যা থেকে যাবে, যা প্রকল্পের সুফলের বদলে যানবাহন চলাচলে উল্টো জটিলতা তৈরি করবে।
তাছাড়া চট্টগ্রামের এই এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়েটি বন্দরের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। এতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আপত্তি ছিল। পরে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক করে নতুন র্যাম্প, অ্যালাইনমেন্ট নির্ধারণ করে। এই কারণে প্রকল্পটির সংশোধন করা হয়েছে বলে জানান ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য।
এ সময় জানানো হয়, আগের নকশায় র্যাম্পগুলো পিসি গার্ডার দিয়ে তৈরি করার কথা ছিল। নতুন নকশায় তা আরসিসি বক্স গার্ডার দিয়ে তৈরি করা হবে, যাতে চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেড থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পের মাধ্যমে লং ভেহিক্যাল নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জাবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, 'মেট্রোরেলের ভাড়া বেশি হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ এই প্রকল্পের মেনটেইন্যান্স কস্ট অনেক বেশি। তাই সেই ব্যয় মেটাতে হলে এরচেয়ে কম ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই।'
এই সময় পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোঃ মামুন-আল-রশিদ বলেন, 'মেট্রোরেলের যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তা দিয়েও মেনটেইন্যান্স কস্ট উঠবে না।'
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, 'নির্ধারণ করা ভাড়া দিয়ে মেনটেইন্যান্স কস্ট উঠবে না এর মানে হচ্ছে সরকার ভর্তুকি দেবে।'
গত সপ্তাহে মেট্রোরেলের ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)।
দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল ও কমলাপুরের ভাড়া ১০০ টাকা। টিএসসি ও সচিবালয়ের ভাড়া ৯০ টাকা। কারওয়ানবাজার ও শাহবাগের ভাড়া ৮০ টাকা। ফার্মগেটের ভাড়া ৭০ টাকা। আগারগাঁওয়ের মতো বিজয় সরণির ভাড়া ৬০ টাকা।
একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বরিশাল (চারকাউয়া) হতে ভোলা (ইলশা-ফেরিঘাট) থেকে লক্ষীপুর পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন; ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড এলায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়া এর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প।
এছাড়া আখাউড়া-আগরতলা-ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের চতুর্থবারের মতো মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।