ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হওয়া কুয়েট ছাত্রকে পুলিশে দিলো প্রশাসন
মোবাইল অ্যাপসে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারবিরোধী নানা তথ্য আদান-প্রদানের অভিযোগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিএসই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে কুয়েট প্রশাসন।
মামলার আগে একই কারণ দেখিয়ে জাহিদুর রহমান নামের ঐ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ইউনিটের নেতাকর্মীরা বেদম মারধর করে।
উক্ত মামলায় জাহিদুরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সোমবার কুয়েটের সিকিউরিটি অফিসার মো. সাদেক হোসেন প্রামানিক খানজাহান আলী থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ১১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় জাহিদুর রহমানকে একই হলের শিক্ষার্থীরা জঙ্গি ও সরকার বিরোধী আখ্যা দিয়ে মারধর করে প্রভোস্ট রুমে আটকে রাখে।
"ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তার মোবাইল ফোন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জাহিদুর রহমান আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ব্যক্তিগত চ্যাটের মাধ্যমে সরকার বিরোধী, মানহানিকর, মিথ্যা ও আক্রমণাত্মক তথ্য আদান-প্রদান করেছে," এজাহারে বলেন তিনি।
সাদেক হোসেন প্রামানিক আরো বলেন, "সে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে কুরুচিপূর্ণ তথ্য আদান – প্রদান করেছে, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নজরে এসেছিল। পরে তার মোবাইলের টেলিগ্রাম অ্যাপ পর্যবেক্ষণে তা আমিও দেখেছি।"
একই মামলায় জাহিদুরের পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেজওয়ান স্যামকেও। ভোলা জেলার বুরহানউদ্দিন উপজেলার মুনিশিরহাট গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
জাহিদুরও একই জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার বাসিন্দা।
খান জাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, "জাহিদুর রহমান এবং রেজওয়ান স্যামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল ডিভাইজ দিয়ে আক্রমণাত্মক মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করে কুয়েট ছাত্রদের মধ্যে অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে।"
তবে জাহিদুরের স্বজনরা বলেছেন, গত রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ড এম এ রশিদ হলের গেস্ট রুমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জাহিদকে ডেকে নিয়ে যায়। তাকে রাত ১১টা পর্যন্ত নির্মমভাবে পেটানো হয়। ওই রাতেই পুলিশ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ব্যাপারে কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জাহিদুরের বড় ভাই নাঈম বলেন, "আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা সত্য নয়। আমার ভাইকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। সে কোনো সংগঠনের সাথে জড়িত না।"
তিনি বলেন, "জাহিদুর এটা করেছে আমার বিশ্বাস হয় না। যদি করেও থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যাররা আছেন, হল প্রভোস্ট আছেন-তারা বিচার করবেন। এভাবে নির্মমভাবে পেটাবে কেন?"
এ বিষয়ে কুয়েটের ড. এম এ রশিদ হলের প্রভোস্ট এম ডি হামিদুল ইসলাম বলেন, "সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে জাহিদুর। এটা নজরে আসায় হলের ছাত্ররা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর আমরা তাকে পুলিশে সোপর্দ করি।"
মারধরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমার হাতে আসার পর কেউ মারধর করেনি। আগে কী হয়েছে তা আমার জানা নেই।"