ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা মামলায় জাবি'র এক শিক্ষার্থী আটক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা হত্যা মামলায় জাবির এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক হওয়া শিক্ষার্থীর নাম মো. মাহউদুল হাসান রায়হান। তিনি জাবির ইংরেজি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং শেখ রাসেল হলের আবাসিক ছাত্র।
আজ রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোরে গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে অভিযান চালিয়ে রায়হানকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
প্রসঙ্গত, শামীম হত্যার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেন। অভিযোগপত্রটি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা হিসেবে গৃহীত হয়েছে, যার মামলা নং ৪৪/৬০৭। আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় রায়হানকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর আনুমানিক বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষের ৩৯ ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটে আসলে কতিপয় ব্যক্তি তাকে মারধর করে। এ খবর জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়।
প্রক্টর অফিসের একটি কক্ষে তাকে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও আশুলিয়া থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম। শামীমকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার জন্য দ্রুত পুলিশ টিমকে প্রক্টর অফিসে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
এ সময়ের মধ্যে, কতিপয় ব্যক্তি প্রক্টরিয়াল টিমকে না জানিয়ে জোরপূর্বক শামীম মোল্লাকে নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে যায়। প্রক্টর ঘটনাটি জানতে পেরে নিরাপত্তা অফিসে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের সরিয়ে দেন এবং নিরাপত্তা অফিসের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ করে দেন।
তারপর প্রক্টর পুলিশের টিমকে আসতে অনুরোধ করার জন্য কলাপসিবল গেটের সামনে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীদের পাহারায় রেখে নিজ অফিসে ফিরে আসেন এবং পুনরায় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি উপস্থিত সংবাদ প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে থাকেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, "এর মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে নিরাপত্তা অফিসের কলাপসিবল গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে শামীম মোল্লাকে আবারও মারধর করে। এ সময় প্রক্টরের নেতৃত্বাধীন প্রক্টরিয়াল টিম ও নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের নিবৃত্ত করেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টায় পুলিশের টিম প্রক্টর অফিসে আসলে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার খোঁজ-খবর নিয়ে জানান, শামীম মোল্লার নামে থানায় পূর্বে একাধিক মামলা রয়েছে।"
"রাত আনুমানিক ৮টার সময় প্রক্টরিয়াল টিম ও নিরাপত্তা শাখা শামীম মোল্লাকে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়। আশুলিয়া থানায় শামীম মোল্লাকে নিয়ে যাবার পথে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ডাক্তাররা শামীম মোল্লাকে মৃত ঘোষণা করেন।"
প্রসঙ্গত, ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় সম্পৃক্ততার জেরে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেট (প্রান্তিক গেট) এলাকায় একদল শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে গণপিটুনি দেয়।
পরে তাকে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসা হলে সেখানে দফা দফায় মারধরের ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হলে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।