জাতীয় নির্বাচনে ‘নিরাপত্তা সামগ্রী’ কিনতে ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ
'নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা বজায় রাখতে' চলতি অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত ১,২২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের পাঠানো একটি সাম্প্রতিক চিঠি অনুসারে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যয় হবে এ অর্থ।
পুলিশের দেওয়া পণ্যের তালিকায় রয়েছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ, প্রয়োজনীয় মোটরযান ও জ্বালানী, গোয়েন্দা, অপারেশনাল ও নিরাপত্তা সামগ্রী।
"প্রয়োজনীয় দাঙ্গা দমন সামগ্রী ও অপারেশনাল সামগ্রী পুলিশে সংযুক্ত করা না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচন পূর্ব ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের জানমালের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া দূরূহ হবে," বলে উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে।
এতে আরো বলা হয়েছে, "প্রয়োজনীয় দাঙ্গা দমন সামগ্রী ও অপারেশনাল সামগ্রী পুলিশে সংযুক্ত না হলে মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে।"
পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি (ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) মো. আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এটি পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। এর সঙ্গে অন্য কোন কিছুর কোন সম্পর্ক নেই।"
পুলিশের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচনের পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ বাহিনীর যেসকল দাঙ্গা দমন সামগ্রী ও অপারেশনাল সামগ্রী রয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার, অপারেশনাল ও নিরাপত্তা সামগ্রী কেনার লক্ষ্যে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন অপরিহার্য।
সরকারের কৃচ্ছ্রতা সাধনের অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরে জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ বাজেট ব্যয় করা যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু জ্বালানির জন্য বাজেট বরাদ্দের শতভাগ ব্যয় করার অনুমতি চেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধির ফলে পুলিশের মোবিলিটি বৃদ্ধি, নবসৃষ্ট পদের বিপরীতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন হওয়া এবং মোটরযান বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া, অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দের শতভাগ খরচের অনুমতিসহ চলতি অর্থবছর অতিরিক্ত ২০৪.৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশের প্রস্তাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে অতিরিক্ত ১৫৮ কোটি টাকা, মোটরযান খাতে ২২৬ কোটি টাকা এবং নিরাপত্তা সামগ্রী কিনতে ৭৭.৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি খাতে অতিরিক্ত ৫৪০ কোটি টাকা, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি খাতে ১২ কোটি টাকা, কম্পিউটার সফটওয়্যার খাতে ৭ কোটি টাকা এবং কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক খাতে ৪৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেনাকাটার বিষয়ে অর্থ বরাদ্ধ চেয়ে আবেদন করা পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) আতিকুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বেশ কিছু সরঞ্জামাদি কেনাকাটার ব্যাপারে অর্থ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
"অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় করলে এসব কেনাকাটা করা হবে। তবে, আগেকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর আগেও এরকম সরঞ্জামাদির বাজেট চেয়ে ক্রয় করা হয়েছিল, সে হিসেবে এটা নতুন নয়," বলেন তিনি।