সরকারি অফিসে ব্যাপকহারে ঘুষ নেওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা: ব্যবসায়ীরা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যালয়সহ দেশের সরকারি অফিসগুলোতে ব্যাপক পরিমাণে ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। এতে ব্যবসা ও নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
রোববার রাজধানীর গুলশানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা অভিযোগ করেন, এনবিআরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ও অন্যান্য অফিসের কর্মকর্তারা ঘুষের জন্য ফাইল আটকে রাখেন।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এর পরিচালক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, "এনবিআরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা কমিশনারের নাম উল্লেখ করার পরেও ঘুষ দাবি করেন। তারা বলেন- কমিশনার আপনার বন্ধু হতে পারে, আমার নয়। ঘুষের মধ্যে থেকে আমার অংশ আমাকে দিন।"
নারায়ণগঞ্জ-ভিত্তিক একটি কারখানার মালিক এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম অন্য একটি সরকারি অফিসের একই রকম পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, "নারায়ণগঞ্জ বিসিকের আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি) সংক্রান্ত পারমিটের জন্য এক শিল্প উদ্যোক্তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের পরিচালককে ফোন করে ঘুষের কথা জানান। পরিচালক তার পরের দিন ফাইলে স্বাক্ষর করেন এবং ঐ উদ্যোক্তাকে তা অফিস থেকে সংগ্রহ করতে বলেন।"
"ফাইল সংগ্রহ করতে গেলে অফিসের নিচের র্যাংকের কর্মকর্তারা ঘুষের অংশ দাবি করে। তারা বলে- পরিচালকের ২০ হাজার টাকার শেয়ার বাদে আমাদেরকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। শেষে তাকে ঘুষ দিয়েই ফাইল নিয়ে আসতে হয়," বলেন তিনি।
ব্যবসায়ী নেতারা আরো বলেন, এ ধরনের দুর্নীতি দেশের ব্যবসায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে এবং স্থানীয়-বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা করতে পছন্দ করেন না।
লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, "আমাদের প্রধান দুশ্চিন্তার জায়গা কাস্টমস অ্যান্ড বন্ড।"
বন্ড লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় ভিয়েতনামের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, "সেখানে মাত্র ৮ ধরনের ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় এবং পাঁচ সপ্তাহে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আমরা কেন তা করতে পারছি না?"
"অনেক সংস্কার করা হয়েছে এবং অনেক কর্মকর্তা বা কমিশনার এসেছেন, কিন্তু পরিস্থিতি একই রয়ে গেছে। ব্যবসায় সাহায্য করার পরিবর্তে যদি নিয়ন্ত্রণের মনোভাব থাকে তাহলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না," যোগ করেন তিনি।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানও সরকারি অফিসে শিল্পপতিরা যে হয়রানির শিকার হন তার কিছু বিষয় তুলে ধরেন।
একটা এইচএস কোড ভুল হলে ১০ দিন পণ্য বন্দরে আটকে থাকে। কর্মকর্তারা ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখেন, কোথায় ভুল ধরা যায়। কারণ দেরি করাতে পারলে কী হয়, …. তা আর বলতে চাই না," বলেন তিনি।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও গ্যাস সংকটের কারণে পোশাক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
'কারখানা স্থাপন বিষয়ে ওয়েব পোর্টাল চালু করা: লাইসেন্সিং, সার্টিফিকেট এবং নিবন্ধন' শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সিপিডি একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে যেখানে শিল্প মালিকরা একটি কারখানা স্থাপনের জন্য কত ধরনের নথির প্রয়োজন তা দেখতে পাবেন।
ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অন্তত ২০ ধরনের নথির প্রয়োজন হয়। ফার্মাসিউটিক্যালস, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের মতো অন্যান্য কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে আরও নথির প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম এবং জিআইজেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ড. মাইকেল ক্লোড।