গাইবান্ধা উপনির্বাচন স্থগিত: তদন্ত কমিটি গঠন, ৭ দিনের মধ্যে দিতে হবে প্রতিবেদন
গাইবান্ধা-৫ আসনের স্থগিত উপনির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য নির্বাচন কমিশন একটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকায় ইসি সদর দপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, তিন সদস্যের কমিটি সাত দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।
তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন উপ-নির্বাচনের বিষয়ে তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে বলে জানান তিনি।
নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। অন্যদের মধ্যে আছেন ইসির দুজন যুগ্মসচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস ও মোঃ শাহেদুন্নবী চৌধুরী।
বুধবার গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন বন্ধ করা হয়। ভোট বন্ধে পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদেরের নির্বাচন বন্ধ করার 'যৌক্তিকতা' নিয়ে প্রশ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে, সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, "আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজেও যদি আমাদের সাথে বসলে তা প্রত্যক্ষ করতেন। অনেককেই বলতে শুনেছি অফিসে বসে এতগুলো কেন্দ্র দেখা কী করে সম্ভব হলো।"
"আজকাল মডার্ন টেকনোলজির যুগে সিসিটিভি দ্বারা রাস্তঘাটও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সিস্টেমটাকে এমনভাবে ডেভেলপ করা হয়েছে যে একটা জায়গায় বসে দুশো-চারশো জায়গা অবহিত হওয়া যায়। কাজেই আমরা যেটা মনে করি এটা খুবই জুতসই একটা প্রযুক্তি যা আমরা প্রথমবারের মত ব্যবহার করেছি। আমার মনে হয়না আগে কোন কমিশন এত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন।"
হঠকারী কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি
সিইসি বলেন, "গাইবান্ধা নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়তো জনমনে কিছু বিভ্রান্তি থাকতে পারে। আমরা টকশোতে শুনেছি কেউ আনন্দিত হয়েছে, কেউ ব্যথিত হয়েছে, কেউ প্রতিবাদ করেছেন, কেউ সমবেদনা জানিয়েছেন। আমাদের মনে হয়েছে এতে করে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। সেই বিভ্রান্তি অপলোপনের জন্য কিছু ব্যাখ্যা আমাদের দেওয়া দরকার।"
হাবিবুল আউয়াল বলেন, "আমরা হঠকারী কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি নি। এই সিদ্ধান্ত সিইসি গ্রহণ করেনি, কমিশন গ্রহণ করেছে। সিইসি কোন সিদ্ধান্ত এককভাবে গ্রহণ করেন না; করতেও পারেন না। কমিশন সদস্যরা বসে আলাপ-আলোচনা করে চিন্তাভাবনা করে যৌথভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিবিঢ়ভাবে প্রত্যক্ষ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
তিনি জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন এক নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও একজন কমিশনার। যখন একাধিক সদস্য নিয়ে এই কমিশন গঠিত হয় তখন একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচিত হন এবং তিনি এ সংস্থার চেয়ারম্যান হন।
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসি যতগুলো নির্বাচন করেছে সবগুলো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে অত্যন্ত সফল ভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি ভোট কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
ইভিএমের গোপন ভোটকক্ষে অবৈধ লোক প্রবেশ করে বা অবস্থান করে ভোটারকে ব্যালট ইউনিটে ভোট দিতে সুযোগ না দিয়ে অবৈধ প্রবেশকারী তার আঙ্গুল দিয়ে ভোট দিয়ে দেন-এমন অভিযোগও রয়েছে।
বুধবার সকাল আটটায় ভোট শুরু থেকে আগারগাঁও-এ নির্বাচন ভবনে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে সিইসি ও অন্যান্য কমিশনার, দায়িত্ব পালনকারী সচিবালয়ের কর্মকর্তাগন ও কারিগরি সহায়তাকারী ব্যক্তিরা পরবর্তীতে মিডিয়ার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি জানান, "ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা তিনটি কেন্দ্রে দেখতে পাই ভোটকক্ষে প্রার্থীর পুরুষ এজেন্টরা একই রকম গেঞ্জি বুকে ও পিঠে প্রার্থীর মার্কা ইত্যাদি প্রিন্ট করা, পড়ে আছেন এবং মহিলা এজেন্টগণ একই রকম শাড়ী পড়া যা আচরণ বিধিমালার ১০ (ঙ) ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। এই সকল এজেন্ট ছাড়াও আরো অনেক অবৈধ লোকজন ভোটকক্ষে অবস্থান করে ভোটাদেরকে ভোট দিতে প্রভাবিত করছেন।"
অনিয়মের ধরন তুলে ধরে কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, ভোটারদের কন্ট্রোল ইউনিটে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার পরপরই এজেন্টগণ গোপন ভোটকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোট দানের সুযোগ না দিয়ে নিজেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই কাজ করছেন। তখন কমিশন থেকে ফোন দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারদেরকে ভোট কক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
"কিন্তু ভোট কক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোন কার্যকরি পদক্ষেপ তাদেরকে গ্রহণ করতে দেখা যায় নি।"
তিনি জানান, তখন ওই তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করার নির্দেশনা কমিশন থেকে দেওয়া হয়। পরে একে একে দুপুর দেড় টা পর্যন্ত ৫০টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের অবস্থা একই রকম দেখা যায়।
"ইতোমধ্যে রিটার্নিং অফিসার একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেন। আমি এবং নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে টেলিফোনে কথা বলি। কিন্তু পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয় নাই। অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও সিসিটিভি দেখার সময় পেলে দেখা যেত যে ও কেন্দ্রগুলোতেও একই অবস্থা তাই কমিশন মনে করে যে এই ধরনের একটি আইন বহির্ভুত ভোট কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না," বলেন তিনি।
বেলা আড়াইটায় কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয় বলে উল্লেখ করেন সিইসি।
এক প্রশ্নের জবাবে, রাশেদা সুলতানা বলেন, "আমরা সিসি টিভিতে শুধু ভোটকেন্দ্রের ভেতরের ও বুথের চিত্র দেখেছি। বাইরে কী হয়েছে, কার ভুমিকা কী ছিল সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করিনি।"
আরেক প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, "আমাদের উপরে কোনরকম চাপ নেই।"