গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আয় বাড়লেও বিতরণ চার্জ কম, তিতাসের মুনাফায় প্রভাব
গ্যাসের দাম বৃদ্ধি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর জন্য সুখবর বয়ে আনলেও, বিতরণ চার্জ কমানোয় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানীটির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
কোম্পানীটির আয়ের মূল উৎস বিতরণ চার্জ কমানোর কারণেই ২০২১-২২ অর্থবছরে তিতাস গ্যাসের মুনাফা কমেছে ২৮.৪৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৮.২১% কম।
গত জুন মাসে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) তিতাস গ্যাসের বিতরণ চার্জ প্রতি ঘনমিটারে ০.১২ টাকা হ্রাস করে।
তিতাস গ্যাস প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিতরণে ০.২৫ টাকা চার্জ পেলেও, বিইআরসি-এর নতুন সিদ্ধান্তে এই চার্জ কমিয়ে ০.১৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বিতরণ চার্জ কমানোয় মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি কোম্পানীটির গ্যাস বিক্রি ও প্রশাসনিক ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ্যাসের যোগান পর্যাপ্ত না হওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানীটির গ্যাস বিক্রির পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে।
ফলে মুনাফা কমে যাওয়ায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশও কমিয়েছে তিতাস গ্যাস।
গত অর্থবছরে তিতাস গ্যাস ২২% নগদ লভ্যাংশ দিলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ঘোষিত এই লভ্যাংশ ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে কম।
এদিকে মুনাফা ও আয় কমার কারণে বৃহস্পতিবার কোম্পানীটির শেয়ার দাম ২.৩৯% কমে প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৪০.৯০ টাকা।
কোম্পানীর কর্মকর্তারা জানান, বিতরণ চার্জ কমিয়ে দেওয়ার প্রভাব অর্থবছরের একমাসে পড়লেও আগামী দিনে কোম্পানীটির আর্থিক অবস্থায় বড় ধরনের সংকট তৈরী করবে।
কারণ কোম্পানীর মুনাফায় বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। ফলে কোম্পানীটি আর্থিক সংকটে পড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানীর অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "কেবল আর্থিক সংকটই নয়, গ্যাস বিতরণ চার্জ হ্রাস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানীটিকে রুগ্ন করে তুলবে। অর্থবছরের শেষ মাসে বিতরণ চার্জ কমানো হলেও মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।"
আয়-ব্যয়ের হিসাব
২০২১-২২ অর্থবছরে গ্যাস বিক্রি ও অন্যান্য উৎস থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৮৩৭০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৫০৪ কোটি টাকা বা ২.৮২ শতাংশ বেশি।
২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে তিতাস গ্যাসের গ্রাহক সংখ্যা ২৮.৭৬ লাখ, যার মধ্যে ২৮.৫৬ লাখই আবাসিক গ্রাহক। এছাড়াও বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে ১২,০৭৬ জন।
কোম্পানীর আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫,৮৫৮.২৬ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস বিক্রি করেছে। তবে এবার গ্যাসের যোগান কম থাকায় বিক্রি হয়েছে ১৫,৬৫৭ মিলিয়ন কিউবিক মিটার।
উল্লেখ্য, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্বাধীনতার পর কোম্পানিটি সরকারি মালিকানায় স্থানান্তরিত হয় এবং এর সামগ্রিক কার্যক্রম বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তত্ত্বাবধানে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।