রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটে রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
আগামীকাল বুধবার (১৯ অক্টোবর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপন করা হবে। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই স্থাপন কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার কর্মকর্তারা প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপনের জন্য দরকারি সব ধরনের প্রস্তুতির কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় ইউনিটে বড় ধরনের পারমাণবিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্ন হবে।
রিঅ্যাক্টর বা পারমাণবিক চুল্লি সচল থাকা অবস্থায়– রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল (আরপিভি) পারমাণবিক জ্বালানি সংরক্ষণ করে, এবং সেইসঙ্গে চুল্লি থেকে তেজস্ক্রিয় দ্রব্য বেরিয়ে যাতে পরিবেশ দূষণ করতে না পারে, তার জন্য কতগুলো প্রতিবন্ধকতার একটির কাজও করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের অক্টোবরে রূপপুর কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে আরপিভি স্থাপন উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক চুল্লির অধিকারী বিশ্বের ৩৩তম দেশ হয় বাংলাদেশ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল, তবে এরমধ্যেও বাধাহীনভাবে কাজ চলেছে।
প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটও একই পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন। প্রকল্প কাজ বাস্তবায়নে, জনশক্তি প্রশিক্ষণসহ মোট ব্যয় হচ্ছে ১২.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৯০ শতাংশ অর্থায়নই করছে রাশিয়া।
বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়ার পর রূপপুর কেন্দ্রের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে প্রায় ৬০ বছর। সে তুলনায় প্রচলিত জ্বালানির একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়ুষ্কাল থাকে মাত্র ২৫ বছর।
দীর্ঘস্থায়ীত্বের পাশাপাশি তেল, গ্যাস ও কয়লা চালিত প্রচলিত পাওয়ার প্ল্যান্টের মতো পরিবেশ দূষণকারী কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ না করেই বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা করবে রূপপুর প্রকল্প।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, দ্বিতীয় ইউনিটের ভৌত অবকাঠামোর ভেতরে রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রায় সব ধরনের পারমাণবিক যন্ত্রপাতি স্থাপন কাজ শেষ হবে।
'এপর্যন্ত নির্ধারিত সময় অনুসারে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে এবং নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যাবে বলে আমরা আশা করছি'- যোগ করেন তিনি।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, 'নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা রেডি। আমরা তো এখানে (উৎপাদিত) কারেন্ট বিক্রি করবো। কিন্তু যারা কিনবে তাদেরকেও নিজস্ব সঞ্চালন লাইন নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে'।
তবে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বহনের সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কিছু অংশের কাজ এখনও শুরু হয়নি।
অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে রাশিয়ার পরমাণু শক্তি সংস্থা- রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
পরমাণু বিজ্ঞানী এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ ভৌত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং আর্থিক অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। আর প্রথম ইউনিটের কাজের ৭০ শতাংশ সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে।
'আমরা এখন প্রথম ইউনিটের কমিশনিং পর্যায়ে রয়েছে, আশা করছি আগামী বছরের অক্টোবরে এটি চালু করা সম্ভব হবে'- যোগ করেন তিনি।
আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউরেনিয়াম জ্বালানি বাংলাদেশে আসবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেছেন, বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়ার দুই বছরের মধ্যেই বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় শুরু করবে কেন্দ্রটি। আর তখনই এটি নির্মাণে নেওয়া ঋণ পরিশোধ শুরু হবে।
'এভাবে ২০ বছরে ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হবে'।
রূপপুর প্রকল্পে বর্তমানে প্রকল্পে ৩৩ হাজার লোক কাজ করছে। এদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার জন বিদেশী নাগরিক।