ড্যাপ বাস্তবায়নে বিভিন্ন পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করুন: পরিকল্পনাবিদরা
ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সকল পেশাজীবীদের সমন্বয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বোর্ড পুনর্গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন পরিকল্পনাবিদরা।
শনিবার বিশ্ব শহর দিবস ২০২২ উপলক্ষে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত "পরিকল্পিত নগর- টেকসই উন্নয়ন- সমৃদ্ধ জীবনমান: প্রেক্ষিত ঢাকা" শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান তারা।
বিআইপি'র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, "ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হলে রাজউককে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সকল পেশাজীবীদের সমন্বয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড পুনর্গঠন করা প্রয়োজন।'
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান এর সঞ্চালনায় বিআইপি'র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত "আমাদের শহর ঢাকা পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন ও বাসযোগ্যতা" শীর্ষক গবেষণার সারাংশ উপস্থাপন করেন বিআইপি'র বোর্ড সদস্য (একাডেমিক এফেয়ার্স) পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় তামজিদুল ইসলাম বলেন, "একটি শহরের বাসযোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় পাঁচটি নির্দেশক- স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ এবং শিক্ষার উপর ভিত্তি করে। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা শহরের অবস্থান বিশ্ব বাসযোগ্যতা র্যাংকিংয়ে এখনো সর্বশেষ দশটি দেশের মধ্যে।"
বাসযোগ্যতার জন্য পর্যাপ্ত সবুজ এবং নীল নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন করা, গেজেটভুক্ত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণ করা, স্থানীয় এলাকা পরিকল্পনা, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং ড্যাপ নির্দেশিকা অনুযায়ী গণপরিসর এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ও বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে তিনি উপস্থাপন করেন।
তামজিদুল ইসলাম বলেন, "বস্তিবাসীর পরিকল্পিত পুনর্বাসন করা, দখল হওয়া ৫৭টি খাল দখলমুক্ত করা, সকল বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করা, জলশয়গুলোর সংরক্ষণ করা দরকার। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকাগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।"
ঢাকা শহর থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে অফিস স্থানান্তর করা, রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়ন করাসহ সকল নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের আলোচনায় নাগরিক, সুশীল সমাজ বা সর্বস্তরের লোকের সমন্বয় করে কাজ করা প্রভৃতি প্রস্তাবনা বিআইপি'র পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়নে সকল পেশাজীবী সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা দরকার। গেজেটভুক্ত ড্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিআইপি উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ বলেন, "এফএআর বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত একটি কনসেপ্ট এবং এটি নগরের ধারণক্ষমতার উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। তাই ড্যাপ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এফএআর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামষ্টিক স্বার্থ বিবেচনা করে পরিবেশ, জলবায়ু, নগরের সকল স্তরের মানুষের ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।"
ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ নুরুল হুদা তার বক্তব্যে ড্যাপের সঠিক বাস্তবায়নে একজন মন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষজ্ঞ টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের প্রতি বিশেষ জোর দেন।
পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহম্মদ খান বলেন, ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন বলতে প্রচলিত বহুতল ভবন গঠনের ধারণাটি সঠিক নয়। বহুতল ভবন গঠনের মাধ্যমে নগর এলাকায় কংক্রিট তথা ধূসর কাঠামো বৃদ্ধি, ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি, শক্তি সংকট এবং ব্যয়বহুল নির্মাণ খরচ ইত্যাদি সমস্যার কথা তুলে ধরেন এই পরিকল্পনাবিদ।