বংশী নদীর তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু
দীর্ঘদিন ও বহু আলোচনা সমালোচনার পর অবশেষে ঢাকার সাভারে বংশী নদীর তীরবর্তী জমি দখল করে গড়ে ওঠা অন্তত ৩ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন।
'ক্রাশ প্রোগ্রাম' নামে ঢাকা জেলা প্রশাসনের দুই দিনব্যাপী এই অভিযান আজ শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সাভারের নামাবাজার এলাকায় শুরু করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি, সাভার পৌরসভা ও স্থানীয় থানা পুলিশের সহযোগিতায় শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "২০১৪ সালে আমরা বলেছিলাম যে প্রায় ২ থেকে ৩ একর জমি অবৈধভাবে দখল হয়েছে, সময়ের পরিক্রমায় এই পরিমাণ এখন ৬ থেকে ৭ একর বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে অন্তত ৩ শতাধিক স্থাপনা রয়েছে।"
তিনি জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই দিনব্যাপী এই ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় এই সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে, প্রয়োজনে দুই দিনের পরেও এই অভিযান চলমান থাকবে।
"ইতোমধ্যে সকাল থেকে আমরা প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। যেহেতু শর্ট নোটিশে এই অভিযান শুরু হয়েছে, এখনো কিছু ব্যবসায়ী তাদের দোকানের মালামাল অপসারণ করছেন, আমরা মালামাল সরিয়ে নিতে তাদের সুযোগ দিচ্ছি, একইসাথে অভিযানও চলমান রয়েছে," যোগ করেন তিনি।
সাভার নাগরিক কমিটি ও পরিবেশবাদী সংগঠন নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কৃষিবিদ ড. রফিকুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্লা টিবিএস'কে বলেন, "দেরিতে হলেও নদীর জমিতে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা চাই নদী তার প্রাণ ফিরে পাক, অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত হোক।"
এসময় নামাবাজার ব্রিজের নিচে নদীর জমিতে অবস্থিত সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গণির স্থাপনার দিকে ইঙ্গিত করে এই পরিবেশকর্মী বলেন, "অভিযানে যেন কোন প্রভাবশালীর স্থাপনাকে ছাড় না দেওয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে।"
উল্লেখ্য, ইতপূর্বে স্থানীয় প্রশাসনের করা অবৈধ দখলদারদের তালিকায় নাম আসে সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গণির। তখন থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েন এই জনপ্রতিনিধি।
যদিও সমালোচনার মুখে বারংবার নদীর জমিতে তার কোন অবৈধ স্থাপনা নেই বলে দাবি করে এসেছেন হাজী আব্দুল গণি।
এদিকে অভিযানকালে নামাবাজার ঘুরে দেখা যায়, নদীর জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনার প্রতিটিতেই রয়েছে পৌরসভার হোল্ডিং নাম্বার ও বিদ্যুৎ সংযোগ।
অবৈধ এসব স্থাপনা কিভাবে হোল্ডিং নাম্বার পেয়েছে সেটি জানতে একাধিকভাবে সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গণির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এসব স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রসঙ্গে পল্লীবিদ্যুৎ ৩ এর জেনারেল ম্যানেজার মোল্লা মো. আবুল কালাম আজাদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সাধারণত জমির মালিকানার কাগজ দাখিলের পরই কোন স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই স্থাপনাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ অনেক আগে দেওয়া হয়েছে যার কারণে এই মুহুর্তে ফাইল চেক না করে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। এখন হয়তো সময় এসেছে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করার।"
অভিযানে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছাড়াও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় পল্লীবিদ্যুৎ সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন।