নিষেধাজ্ঞা শেষ, নোয়াখালীর হাতিয়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে মিলছে ইলিশ
আবারো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ইলিশ ঘাটগুলোতে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত মধ্যরাতে মাছ ধরতে বের হন উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক জেলে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পড়ে, ফলে অল্প সময়েই মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরেছেন অনেকে। চলতি মৌসুমে ইলিশ না পাওয়ার খরা কাটিয়ে এবার ভালো মাছ পাওয়ার প্রত্যশা জেলেদের। মাছের ভালো দামও পেয়েও খুশি তারা।
জানা গেছে, গত ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ২৮ অক্টোবর শুক্রবার মধ্যরাতে। রাতেই হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাট, বাংলা বাজার, কাজীরঘাট, সূর্যমূখী, বুড়িরদোন, রহমত বাজার, নতুন সুইজ, কাদিরা সুইজ, জংগলিয়া, মোহাম্মদ আলী সুইজ, মোক্তারিয়াঘাট, আমতলিঘাট ও কাটখালিঘাটসহ অর্ধশতাধিক ঘাট থেকে মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে যায় জেলেরা। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভালো মাছ পেয়ে শনিবার ভোরে ঘাটে আসতে শুরু করে ট্রলারগুলো। জেলেরা মাছ বিক্রি করে আবার দ্রুত সাগরে ফিরে যাচ্ছেন।
জেলেরা বলছেন, শুক্রবার দিনব্যাপী জাল মেরামত, ট্রলারে তেল, বরফসহ সকল প্রস্তুতি শেষ করার পর মধ্যরাতে গভীর সমুুদ্রে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে অধিকাংশ জেলেদের জালে ধরা পড়তে থাকে রূপালি ইলিশ। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে সাগরে পানি বেশি রয়েছে। রাতে কুয়াশা পড়ায় সাগরের পানির তাপমাত্রা কম হওয়ায় জালে ভালো মাছ ধরা পড়ছে। তবে বড় সাইজের মাছের সংখ্যা এখনও কম। সময় বাড়ার সাথে সাথে আরও ভালো ও বড় মাছের দেখা মিলবে। এভাবে ভালো মাছ পেলে চলতি মৌসুমের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা তাদের।
বাংলা বাজার ঘাটে সকালে ট্রলারে মাছ নিয়ে আসা জেলে নিত্য হরন দাশ বলেন, আমরা ১৭ জন জেলে রাতে মাছ ধরতে সাগরে গিয়েছিলাম। ফজরের নামাজের আগপর্যন্ত আমদের জালে প্রায় ৩মণের বেশি মাছ ধরা পড়ে। নিষেধাজ্ঞার পর বাজারের প্রথমদিন হওয়ায় আমরা মাছ নিয়ে দ্রুত ঘাটে চলে আসি। বেশিরভাগ মাছের ওজন ৮০০ থেকে ৯০০গ্রাম হচ্ছে। প্রতি মণ মাছ আকার ভেদে আড়তে ৮- ১০হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সকাল ১০টার দিকে আবার সাগরের উদ্দেশ্যে ঘাট ছেড়ে যায় তাদের ট্রলারটি।
আড়ৎদার মো. শাহজাহান বলেন, ভোর থেকে বাংলা বাজার ঘাটে প্রায় অর্ধশতাধিক মাছ ধরার ট্রলার মাছ নিয়ে ফিরে আসে। প্রায় প্রতিটি ট্রলারে ৫মণ বা তারও বেশি মাছ ছিল। দীর্ঘদিন সাগরে না যাওয়ার কষ্ট এ মাছ পাওয়ার মাধ্যমে ভুলে যাবে জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম রাতে জেলেদের জালে যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়েছে- এটা অব্যহত থাকলে জেলেরা নিজেদের ধার-দেনা শোধ করে পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মো. আশারুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে তারা উপজেলার কয়েকটি মৎস্য ঘাট পরিদর্শন করেন। জালে ভালো মাছ পাওয়া যাচ্ছে। মাছ পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা জেলেরা। চলতি মৌসুমের শুরুতে মাছ না পাওয়ার যে হতাশা জেলেদের মধ্যে ছিল, পর্যাপ্ত মাছ পাওয়ার মাধ্যমে সে সংকট তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।