পেট্রল বোমা হামলার ভয়াবহতার স্মৃতিচারণ করলেন ভুক্তভোগীরা
২০১৩-১৫ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় পেট্রোল বোমা হামলার শিকার ব্যক্তিরা তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ও যন্ত্রণার নিয়ে আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেছেন।
শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে আওয়ামী লীগের আয়োজিত 'অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ: বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র' শীর্ষক অনুষ্ঠানে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এবং হামলার শিকার জীবিতরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি করেন।
অনুষ্ঠানটিতে দেওয়া বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন পেট্রোল বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানান, সেইসাথে নিহতদের প্রতি গভীর দুঃখ ও সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, "অগ্নিসংযোগ মানবতার বিরোধী অপরাধ। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিচার চলছে। এমনকি যারা হামলার নির্দেশ দিয়েছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।"
অনুষ্ঠানে কিছু ভুক্তভোগীদের বক্তব্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
২০১৩ সালে নিহত ১৭ বছর বয়সী কিশোর নাহিদের মা রেনু বেগম। ঢাকায় আন্দোলন চলাকালীন মাদারীপুর থেকে ঢাকা আসার পথে নিহত হন নাহিদ।
আমার নাম রেনু বেগম। আমি মাদারীপুরের শিবচর থেকে এসেছি। আমার ছেলে [নাহিদ] ঢাকায় যাচ্ছিল। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমা হামলায় মৃত্যু হয় তার।
"নাহিদকে এমনকি ঢামেক হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া যায়নি। মারা যাওয়ার সময় আমি ওকে দেখতেও পারিনি। এমনকি মৃতদেহও দেখতে পারিনি। ঘটনার পর আমি পড়ে গিয়েছিলাম। এখন ঠিকমতো দেখতে ও শুনতে পাই না। আমি এখনো সন্তান হত্যার বিচার পাইনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমার সন্তানের (হত্যার) বিচার চাই। আপনে আমার মা, আমি আপনার সন্তান। আমার সন্তান হত্যার বিচার আপনে করবেন। আমার মায়ের কাছে অনুরোধ করতে পারি।'
পেট্রল বোমা হামলায় আহত ট্রাক ড্রাইভার রফিকুল ইসলাম
"আমি সাধারণ ট্রাক ড্রাইভার। সন্তানদের খরচের জন্য সেদিন গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম। বিএনপি-জামায়াতের চারদিক থেকে ছোড়া পেট্রল বোমার শিকার হই আমি
'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি এর কঠিন থেকে কঠিনতর বিচার চাই,' বলেন তিনি।
নিহত পুলিশ কনস্টেবল জাকারিয়ার বিধবা স্ত্রী মায়া বেগম।
পিটিয়ে হত্যা করা পুলিশ কনস্টেবল জাকারিয়ার বিধবা স্ত্রী মায়া বেগম।
"আমার স্বামী গোপালগঞ্জে চাকরি করতেন। ডিউটিতে যোগ দিতে জন্য ঢাকার কাঁচপুরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন তাকে হত্যা করে।
"আমি চাই দায়ীদের শাস্তি হোক। আমার একটি ছেলে আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার জন্য এবং আমার চিকিৎসার জন্য সাহায্যের দাবি জানাচ্ছি।"
বিএনপির নৃশসংতার ছবি তোলায় নির্যাতিত হয়েছিলেন ফটোসাংবাদিক আবু সাইদ তামান্না।
"আমি দূর থেকে ছবি তুলছিলাম। তারা [বিএনপি] নিজেদের মধ্যে পেট্রোল বোমা বিতরণ করছিল। তখন ধাওয়া করে ছুরি দিয়ে হামলা করা হয়। আমার মাথা ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়। আমাকে দেখতে স্বাভাবিক মনে হতে পারে, কিন্তু সেই হামলার পর আমি এখনও সুস্থ হইনি।
"রাজনীতির নামে মানুষজনকে মেরে আহত করবে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এর বিচার চাই।"
কোচিং শেষে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হয়েছিল শিক্ষার্থী অন্তু বড়ুয়া। এরপর থেকে তার দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে।
"২০১৩ সালের ২৮ শে মার্চ আমার ওপর পেট্রোল বোমা হামলা হয়েছিল। এ ঘটনায় আমার চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার প্রশ্ন আমার মতো শিশুদের কী দোষ ছিল?
"পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ কিভাবে রাজনীতির অংশ হতে পারে? আমরা একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চাই।"
২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ি কোনাপাড়ায় পেট্রোল বোমা হামলার শিকার হন সালাউদ্দিন ভূঁইয়া।
"প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজ এখানে দেখে খুব খুশি আমি। ২০১৩ সালে হামলার পর হাসপাতালে থাকাকালীন তিনি আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন। আমার দুই ছেলে, মা, বড় সংসার। আগে চেহারা ভালো ছিল, সব জায়গায় চাকরি পেতাম, এখন ঝলসে যাওয়া চেহারা দেখে কেউ চাকরি দেয় না। কাজ করার সামর্থ্য আছে, কিন্তু কেউ কাজ দেয় না।
"বিগত বছরগুলোতে পরিবারের ভরণপোষণ চালানো খুবই কঠিন হয়য়ে উঠেছে। আমার এক ছেলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায দিচ্ছে। দয়া করে আমাদের চাকরি দিন। আমরা বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় চাই না। তারা শুধু পেট্রোল দিয়ে হামলা করতে জানে।"