প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট পুনঃগণনা করলো ইসি
ঢাকা উত্তর সিটির কর্পোরেশনের ৬ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের ফলাফল ট্রাইব্যুনালের আদেশে প্রথমবারের মত পুনঃগণনা করেছে ইলেকশন কমিশন (ইসি)। এরমধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো ইভিএমের ভোটের ফলাফল পুনঃগণনা হলো বলে জানিয়েছে ইসি।
রোববার এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠায় নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান।
এদিকে, ভোট পুন:গণনার ৫৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে চারটি কেন্দ্রের অডিট গায়েব হয়ে গিয়েছে। যার ফলে ভোটের দিন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দেওয়ার ফলাফলের সঙ্গে প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ভোটারের শনাক্ত করার যে তথ্য সংরক্ষিত ছিল, সেগুলো পুনরায় পরীক্ষা করাতে পারেনি ইসি।
অন্যদিকে, ইভিএমে ভোট পুনঃগণনা করা যায় ইসির এমন দাবির সমালোচনা করেছে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন।
ইভিএম এ ভোট গ্রহণ করা হলেও তা পুনঃগণনা করা যায় উল্লেখ করে ইসি সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট হয়। উত্তর সিটির ৬ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের একজন প্রার্থী ভোট পুনঃগণনার জন্য নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।"
ট্রাইব্যুনাল ওই ওয়ার্ডের ভোট পুনঃগণনার আদেশ দেন। সে আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ভোট পুনঃগণনার জন্য কমিটি গঠন করেন। এ কমিটি ৬ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতিতে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ভোট পুনঃগণনা করেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার, প্রার্থী, এজেন্ট এবং তাদের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভোট পুনঃগণনার জন্য নির্বাচনী মালামালের সিলগালা বস্তা খোলা হয়। ইভিএম মেশিনে অডিটকার্ড প্রবেশ করিয়ে তা থেকে ফলাফল দেখা হয় এবং তা নির্বাচনের দিন ঘোষিত ফলাফলের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। অডিট কার্ডের ফলাফল এবং ঘোষিত ফলাফল একই পাওয়া যায়।
এদিকে, ভোট পুনঃগণনার ৫৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে চারটি কেন্দ্রের অডিট গায়েব হয়ে গেছে। যার ফলে ভোটের দিন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দেওয়ার ফলাফলের সঙ্গে প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ভোটারের শনাক্ত করার যে তথ্য সংরক্ষিত ছিল সেগুলো পুনরায় পরীক্ষা করাতে পারেনি ইসি।
অডিট কার্ড গায়েব হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, "সিলগালা করা বস্তা থেকে অডিকার্ড গায়েব হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওই বস্তা প্রিজাইডিং অফিসার দিয়েই খুলাতে হয়। এই রকম যদি কার্ড হারিয়ে থাকে, অবশ্যই আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেবো। এটি মোটে স্বাভাবিক নয়, এটি অস্বাভাবিক ঘটনা।"
অডিট কার্ড হারিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক মো. আবদুল বাতেন বলেন, "সিলগালা করা বস্তায় অডিট কার্ডের সঙ্গে প্রিজাইডিং অফিসারে রেজাল্ট শিট, ইভিএম থেকে বের হওয়া ফলাফলের প্রিন্ট কপি থাকবে, এটিই নিয়ম। আমরা সিলগালা করা বস্তাগুলো প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রার্থীদের সামনেই খুলেছি। তিনটি বা চারটি অডিট কার্ড মিসিং আছে।"
"তবে ওখানে আবার প্রিজাইডিং অফিসারের যে রেজাল্ট শিট, সেটি ছিল এবং ইভিএম থেকে ফলাফলের যে প্রিন্ট কপি থাকে, ভোটের দিন যেটি বস্তার ভেতরে দিয়েছিল সেটি পেয়েছি। সবার সামনেই ওটা কাউন্ট করেছি," যোগ করেন তিনি।
ভোট পুনঃগণনার দাবির সমালোচনা করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন টিবিএসকে বলেন, "মেশিনে ফল পুনঃগণনার কি আছে! মেশিন সবসময় একই ফলাফল দেবে, তা যতবারই গণনা করা হোক না কেন। শুধু অডিট ট্রেইল থাকলেই পুনঃগণনা করা যেত।"
তিনি জানতে চান, "ইসি কেনো ইভিএমকে বার বার এস্টাবলিস করতে চাচ্ছে? তারা ১৫০ টিতে ইভিএম এ নির্বাচন করতে চায়। তাহলে বাকি ১৫০ আসনের কী হবে? সেখানে কি ভালো ভোট হবে না?"
"এর দ্বারা একটি বিভাজন তৈরি হচ্ছে। ফলে ইসির যত ভালো ইচ্ছাই থাকুক না কেনো, তাদের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তারা কি তাহলে একটি বিতর্ক চাচ্ছে। এমনিতে ইসির ওপরে মানুষের আচ্ছা নেই। এর থেকে তারা সিসিটিভি লাগাতে পারে," বলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার।
দেশের এই অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে এই ধরনের মেশিন কেনার যুক্তি নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। "এছাড়া, এই মেশিন সংরক্ষণ ও মেইনটেনেন্সেও অনেক খরচ হবে। এটি একটি হাই টেকনিক্যাল ইস্যু। এটা এই মুহূর্তে বিলাসিতা ছাড়া কিছু না," যোগ করেন সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, "কাগজে ভোট করতে সমস্যা কোথায়? কাগজে ভোট করলেও জাল ভোট ধরা সম্ভব, কিন্তু ইভিএম-এ সেটি করা যায় না। কাগজে অতিরিক্ত ভোট পরলেও তা গণনার মাধ্যমে বের করা সম্ভব।"
"যেখানে ৫০ ভাগ লোক চাচ্ছে না, সেটি রাখতে হবে কেনো? এটি একটি ধীরগতির প্রক্রিয়া। ফলে কম ভোট পড়ে। আমাদের তো এত অত্যাধুনিক মেশিনের দরকার নেই," যোগ করেন ইনি।