শুল্কায়ন জটিলতায় গম-চাল নিয়ে সাগরে ভাসছে ৪ জাহাজ
প্রায় ১ লাখ টন গম ও ৫ হাজার ৩০০ টন চাল নিয়ে গত চারদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙরে ৪টি জাহাজ ভাসলেও কাস্টমসের শুল্কায়ন জটিলতায় তা ছাড় করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। সরকারি পর্যায়ে আমদানি এসব পণ্যের বিষয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বার বার কাস্টমস অফিসে গেলেও ডেস্কে খুঁজে পাচ্ছেন না কর্মকর্তাদের।
২৪ ঘন্টার মধ্যে খাদ্য পণ্য শুল্কায়নের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও পণ্য খালাসে কাস্টমই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
অন্যদিকে, এ বাবদ প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে ক্ষতিপূরণ। শুল্কায়ন না হওয়ায় চারটি জাহাজের ডেমারেজ চার্জ (ক্ষতিপূরণ) বাবদ ২ লাখ ৯০ হাজার ডলার গুনতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট। প্রতিদিন বাড়ছে এ ডেমারেজের পরিমাণ।
সরকারি গম আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট সেভেন সিজ শিপিং লাইন-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী আকবর টিবিএসকে বলেন, শুল্কায়নের জন্য সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং খাদ্যবিভাগের কর্মকর্তারা শনিবার (১২ নভেম্বর) সকাল থেকে কাস্টমসে বসে আছে। তবে সকাল ১১ টা পর্যন্ত কাস্টমসের শুল্কায়ন সংশ্লিষ্ট গ্রুপ ৮ এর দরজা কেউ খোলেনি। রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কেউই আসেননি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, কাস্টমসের শুল্কায়ন সেকশন ৮ এবং শুল্কায়ন সেকশন ৬-এর কর্মকর্তাদের অহেতু হয়রানির কারণে একদিনের কাজ ৫ দিনেও শেষ হয়না ঠিকমতো।
"কয়েকজন কর্মকর্তার কারণে পণ্যগুলো সময়মতো খালাস করা যায়না। ফলে ডেমারেজ বাবদ আমাদের লাখ লাখ ডলার গুনতে হয়," বলেন তিনি।
শুল্কায়নের জন্য কাস্টম হাউসে উপস্থিত থাকা খাদ্য বিভাগের ফুড ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন শনিবার দুপুর ১২ টায় টিবিএসকে বলেন, "আমরা সকাল থেকে কাস্টমসে বসে আছি। কিন্তু দুপুর ১২ টায় পর্যন্ত কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তার দেখা পাচ্ছিনা। শুল্কায়ন করতে না পরায় ইউক্রেন থেকে আসা গমের খালাস শুরু করা যাচ্ছেনা।"
এদিকে, এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফায়জুর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে একাধিকবার যোগোযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
অন্যদিকে শিপিং লাইন এর তথ্য মতে, খাদ্য বিভাগের ঊর্ধতন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে শুল্কায়নের বিষয়টি অবহিত করলেও কাস্টমসের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা। ইউক্রেন থেকে ৫২ হাজার ৫০০ টন গম নিয়ে ম্যাগনাম ফরচুন জাহাজ বহিনোঙরে এসেছে আজ ৪ দিন।
এ পণ্য খালাস করতে না পারায় প্রতিদিন জাহাজ ভাড়া বাবদ ৩০ হাজার ডলার ডেমারেজ জমা হচ্ছে। গত ৪ দিনের হিসাবে ডেমারেজের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার।
বিকেএমইএ'র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বাধা এইচ এস কোড সংক্রান্ত জটিলতা। এ ধরনের জটিলতা সৃষ্টির কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"এই জটিলতা তৈরি করে সরকার কিংবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোনো লাভ নেই; বরং ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন," বলেন তিনি।
এদিকে, ৪৯ হাজার ৪০০ টন গম নিয়ে এমভি ভেরুদা নামের জাহাজটি গত ৭ নভেম্বর রাশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর শনিবার (১২ নভেম্বর) সকাল থেকে গম খালাস শুরু হয়েছে। শুল্কায়ন করতে দেরি হওয়ায় এই জাহাজটিও ৪ দিন অলস বসে ছিল বহিনোঙরে। অলস বসে থাকায় জাহাজটির ভাড়া বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার ডলার ডেমারেজ গুনতে হবে শিপিং এজেন্টকে।
সেভেন সিজ শিপিং এজেন্ট এর তথ্য মতে, শুল্কায়ন না হওয়ায় মিয়ানমার থেকে ২ হাজার ৬৫০ টন চাল নিয়ে গত ৭ নভেম্বর এমসিএল-৭ এবং একই পরিমাণ চাল নিয়ে এমসিএল-১৯ গত ৮ নভেম্বর বহিনোঙরে পৌঁছালেও জাহাজ দুইটির পণ্য খালাস করা সম্ভব হয়নি। এই জাহাজ দুটিও সাগরে অলস ভাসছে।
ছোট আকারের জাহাজগুলোকে ডেমারেজ বাবদ গুনতে হয় প্রতিদিন ৫ হাজার ডলার। সেই হিসেবে এ জাহাজ দুটিকে ইতোমধ্যেই প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে হবে বলে জানান সেভেন সিজ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।