চট্টগ্রামে ১৫ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমিকে আবাদযোগ্য করার উদ্যোগ
চট্টগ্রামে অনাবাদি প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমি আবাদযোগ্য করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। সরকারি নির্দেশনা অনুসারে টানা ৩ বছরের অধিক কোন জমি অনাবাদি রাখলে খাস করে নেওয়ার আইন জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করছে জেলা প্রশাসন। অনাবাদি জমি চিহ্নিত করতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন।
ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি টানা তিন বছর পতিত রাখলে, তা সরকারি খাস জমি করে দেওয়া হবে— জানিয়ে রোববার (১৩ নভেম্বর) গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। অনাবাদি জমিগুলোতে শাকসবজিসহ সবুজ ফসলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনাবাদি জমি খুঁজে বের করতে মন্ত্রী সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিসিদের সহায়তা নিয়ে এসব অনাবাদী জমি খুঁজে বের করে আবাদযোগ্য করে তোলার নির্দেশও দেন তিনি। এরপর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় অনাবাদি চিহ্নিত করতে শুরু করে প্রশাসন।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার মধ্যে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৮ হাজার ৯৬৬ হেক্টর। এর মধ্যে প্রকৃত আবাদি জমি রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৮১০ হেক্টর। আর বাকি চাষযোগ্য ১৪ হাজার ১৫৬ হেক্টর জমি বছরব্যাপী পতিত থাকে।
উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি- কৃষির মৌসুমকে এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। তবে ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিদিনই জমিতে কৃষি কাজ হয়। নিজস্ব চিন্তাধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে চাষাবাদ করে কৃষকেরা। এ কারণে কৃষির মৌসুমভিত্তিক চাষযোগ্য পতিত জমির পরিমাণ ওঠানামা করে। খরিফ-১ মৌসুমে প্রধান ফসল হলো আউশ ধান এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি। এ মৌসুমে আবাদি জমির পরিমাণ ৯৩ হাজার ৮৮২ হেক্টর থাকে। বাকি ১ লাখ ২০ হাজার ৯২৮ হেক্টর জমি পতিত থাকে। খরিপ-২ মৌসুমে প্রধান ফসল হলো আমন ধান এবং শরৎকালীন সবজি। এ মৌসুমে ২ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। বাকি পতিত জমির পরিমাণ থাকে ৮৫৬ হেক্টর। এছাড়া রবি মৌসুমে প্রধান ফসল হলো বোরো ধান, শীতকালীন সবজি, তেল ফসল, ডাল ফসল, গম ও ভুট্টা। এই মৌসুমে আবাদ করা হয় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৫৮ হেক্টর জমিতে। বাকি ৫৭ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি পতিত থেকে যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, "চট্টগ্রাম জেলায় পতিত জমিগুলো আবাদযোগ্য করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেচ সুবিধার অভাব, দেরিতে রোপন ও কাটার সমস্যার কারণে জমি পতিত থাকে। সেচ সুবিধা বৃদ্ধিসহ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা চলছে।"
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরকারি আইন অনুযায়ী, কৃষি জমি কেউ যদি পরপর তিন বছর পতিত রাখে এবং চাষাবাদ না করে তাহলে সেটা খাস হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে নিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি টানা তিন বছর পতিত রাখলে, তা সরকারি খাস জমি করে দেওয়া হবে— জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে। জেলার সকল বিভাগীয় প্রধান, ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং জনিপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলার যে সকল অনাবাদী জমি রয়েছে এবং যে সকল এক ফসলি জমি রয়েছে; সেগুলোকে দুই ফসলি এবং দুই ফসলি জমিগুলোকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করা হবে। বিশেষ করে তৈলবীজ উৎপাদন যেমন সরিষা, তিল, বাদাম এ জাতীয় ফসলের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সরকার প্রণোদনা দিয়েছে; তৈলবীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পতিত জমিগুলোতে সবজির চারা এবং ফলের চারা রোপণ করা হবে। চট্টগ্রাম থেকেই সেই বিপ্লব শুরু করে অনাবাদী জমিগুলোকে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সবুজ ফসল, শাকসবজি ও ফলমূলের চারায় সুশোভিত করবো।"