নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১, রিজভীসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা আটক
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহতের নাম মকবুল হোসেন (৩০)।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতের দেহে গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্দেশনা অমান্য করে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় সমাবেশ করা যাবে না। কিন্তু এ নির্দেশনা অমান্য করে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীকে দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ব্যানার হাতে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই এখানে জড়ো হচ্ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
বেলা ৩টার দিকে পুলিশ বিক্ষিপ্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সোয়াট সদস্যরাও এসে যোগ দেয়।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আহত প্রায় ২০ জন কর্মীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকেও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার বিকল্প প্রস্তাব না দিলে নয়াপল্টনেই সমাবেশ হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। আমরা নয়া পল্টনে সমাবেশের কথা বলেছি। এখন বিকল্প প্রস্তাব দিতে হলে সরকারকে দিতে হবে। সরকারকে গ্রহণযোগ্য বিকল্প প্রস্তাব দিতে হবে।"
নয়া পল্টনে সমাবেশের অনুমতি পুলিশ না দিলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "পুলিশ পুলিশের কাজ করবে আমরা আমাদের কাজ করবো। নয়াপল্টনের সমাবেশ করব। তবে আমরা চাই পুলিশ যেন দলীয় ভূমিকা পালন না করে।"
এটা পুলিশের অযৌক্তিক পদক্ষেপ: ফখরুল
সংঘর্ষের খবর পেয়ে বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে বিএনপি কার্যালয়ে ছুটে যান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, "পুলিশি এই অ্যাকশনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। একটা ভয়াবহ, ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করতে পারি না, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।"
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, 'আমাকে আমার কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের লোকজন ঢুকছে, বের হচ্ছে। আমরা সন্দেহ করছি, তারা ভেতরে বোমা জাতীয় কিছু রেখে এর দায় আমাদের ওপর চাপাবে।'
সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপি সমাবেশ না করলে ১৪৪ ধারা: ডিএমপি
সংঘর্ষের মধ্যেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ১০ ডিসেম্বরের রাজনৈতিক সমাবেশ রাস্তায় নয়, খোলা মাঠেই হতে হবে।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আয়োজন করতে রাজি না হলে ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়বে।
পুলিশ ইন্টেলের উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ১০ ডিসেম্বরের জনসভাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ১০ লাখ লোক জড়ো করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, নয়াপল্টনে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০ হাজার মানুষের সমাগম হতে পারে, বাকিরা নগরে তীব্র জনস্রোত সৃষ্টি করবে।
"এমন বিশৃঙ্খলার মধ্যে তো আমরা নিষ্ক্রিয় বসে থাকতে পারি না।"
"জনদুর্ভোগ ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে এর দায়িত্ব নিতে আমরা রাজি নই", বলেন ডিএমপি কমিশনার।