ঢাকার পথে যত বাধা
বিএনপির গোলাপবাগ মাঠের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সাভার ও নারায়ণগঞ্জে ঢাকার প্রবেশমুখে পুলিশি তল্লাশির সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এরমধ্যে গণপরিহন সংকটে যাতায়াতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে।
নারায়ণগঞ্জে বন্ধ গণপরিবহন
আজ শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ভোর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের সব রুটের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া, সাইনবোর্ড ও চিটাগাং রোড এলাকায় সকাল থেকে ঢাকাগামী কোন বাস চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে না। কিছু লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা চলছে এই পথে।
বাস বন্ধ থাকায় পথে পথে নানা ভোগান্তিতে সাধারণ যাত্রীরা। অফিসমুখী বা বিভিন্ন কাজে বের হওয়া মানুষ দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অটোরিকশা আর মিশুক দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। কেউবা চড়ছেন লেগুনা, পিকআপ ভ্যানে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিদিনি ঢাকায় গিয়ে চাকুরি করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি টিবিএসকে জানান, "২ নং রেল গেইট এলাকা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত আসতে ৩টি পরিবহন বদলাতে হয়েছে। ভাড়াও দিতে হয়েছে বেশি। এখান থেকে আবার ঢাকায় যাচ্ছি, সামনে কী হয় জানি না।"
গণপরিবহন বন্ধের বিষয়ে শুধু যাত্রী নয়, পরিবহন শ্রমকিরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শ্রমিকরা টিবিএসকে বলেন, "আমরা দিন মজুর। বাস বন্ধের কারণে সাংসারিক চাপে পড়বো।"
পরিবহন শ্রমিকরদের কেউ রাতে আবার কেউ কেউ সকালে স্ট্যান্ডে এসে জানতে পারেন বাস বন্ধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন চালক বলেন, "রাতে শুনেছি চলবে, সকাল থেকে বন্ধ। কী কারণে বন্ধ রয়েছে, সেটা জানি না।"
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার প্রবেশপথে চলছে পুলিশি তল্লাশি
গত দুই দিন ধরে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে পুলিশের তল্লাশি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। শনিবার ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও মৌচাক, নগরীর চাষাঢ়া এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসব সড়কে নাশকতা প্রতিরোধে ৭টি স্থানে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু জানান, "গণপরিবহন বন্ধ থাকার বিষয়টি পরিবহন মালিকদের হাতে।"
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ৮০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা সিলেট মহাসড়কের ভুলতা, শিমরাইল, কাঁচপুর সেতুর পূর্বপাশ, মদনপুর ও রূপগঞ্জের ৩০০ ফুট সড়ক সহ বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত তল্লাশি চেকপোস্টে থামানো হচ্ছে যানবাহন।
নারায়ণগঞ্জের সড়ক বা মহাসড়কে বিএনপির নেতাকর্মীদের কোন মিছিল দেখা যায় নি। তবে, শুক্রবার বিকাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহরে মিছিল করছে; শনিবারও দুপুর থেকেও রয়েছে কর্মসূচি। রাতেও মহড়া দিয়েছে ওসমানপন্থী নেতাকর্মীরা।
আমিনবাজার চেকপোস্ট থেকে আটক অন্তত ২৩
রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ আমিনবাজারের পুলিশ চেকপোস্টে আজ সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অন্তত ২৩ জন ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসাবে পুলিশ আটক করেছে বলে জানা গেছে।
তবে প্রাথমিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহেল কাফী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, "সুনির্দিষ্ট করে আসলে বলা যাবে না যে কতজন আটক। তবে আনুমানিক ২০ জন হতে পারে।"
"ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে কয়েকজনকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়েছে। কোনো মামলার আসামী না হলে বা তেমন কিছু পাওয়া না গেলে তাদেরও হয়তো ছেড়ে দেওয়া হবে," বলেন তিনি।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও চলছে পুলিশি তল্লাশি
সকাল থেকে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর থেকে গাবতলি পর্যন্ত প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশের তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মত।
বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা যায় সড়কে চলাচলরত ঢাকামুখী গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
এছাড়া সকালের দিকে সড়কে কিছু গণপরিবহন চলতে দেখা গেলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে তা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। এতে করে চরম দূর্ভোগে পড়ে সড়কে চলাচলরত সাধারণ মানুষ।
গণপরিবহন সংকট প্রসঙ্গে সাভার পরিবহন ব্যানার মালিক সমিতির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন টিবিএস'কে বলেন, "গতকাল আমরা ২০/৩০টি গাড়ি চালিয়েছি, কিন্তু আজ ২০০ এর মধ্যে একটি বাসও সড়কে নেই।"
তিনি বলেন, "মোড়ে মোড়ে বাস থামিয়ে পুলিশ তল্লাশি করছে, স্টাফদের মারধর পর্যন্ত করা হচ্ছে। আবার পুলিশি তল্লাশি ও হয়রানীর ভয়ে যাত্রীও কম। বাস নামালে তেলের খরচও উঠবে না, তাই আজ বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ঢাকামুখী পথচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন চেকপোস্টে পুলিশ গণপরিবহন ঘুরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিকল্প উপায় রিকশা চলাচলেও বাধা দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাই অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
বেলা ১২টা নাগাদ সাভারের আমিনবাজার চেকপোস্ট ঘুরে দেখা যায় চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি ঢাকামুখী রিকশাগুলোকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এমনকি কোন কোন রিকশার চাকার হাওয়া ছেড়ে দিতে দেখা যায় এসময়।
আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, অসুস্থ রোগীকে দেখতে নবীনগর থেকে সকালে একটি বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। পথিমধ্যে বাসটি আমিনবাজার চেকপোস্টে পৌঁছালে পুলিশ তা ঘুরিয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে গাবতলীর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
যদিও চেকপোস্টে কাউকে হয়রানি কিংবা ঢাকায় প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহেল কাফী। তিনি টিবিএসকে বলেন, "আমরা কাউকেই ঢাকায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছি না। সড়কে গণপরিবহন না চললে তো আমাদের কিছু করার নেই, সকালে গাড়ি চলাচল করেছে।"
তিনি বলেন, "মহাসড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ, তাই দুর্ঘটনা এড়াতে রিকশা চলাচলে পুলিশ নিরুৎসাহিত করছে মাত্র।"