কে হবেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক?
স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। আগামী ২৪ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন দলটির ২২তম জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।
দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা এবারও থাকছেন, সেটি মোটামুটি নিশ্চিত। দলের শীর্ষ পদে অন্য কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নজির নেই। এখন পর্যন্ত সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন।
তবে সাধারণ সম্পাদক পদে এবার কে আসছেন সেটিই এবারের কাউন্সিলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে এখন। অনেকেই বলেছেন আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করেই এই পদে মনোনয়ন পেতে পারেন।
টানা দুই মেয়াদে দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি আবারও থাকতে পারবেন নাকি পদটিতে পরিবর্তন আসছে- এ আলোচনা এখন আওয়ামী লীগের ভেতরে। তবে আওয়ামী লীগে টানা তিন মেয়াদে কারও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের রেকর্ড নেই।
অন্যদিকে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রতিপক্ষ বিএনপি এবার রাজপথে শক্তি দেখানোর চেষ্টা করছে এবং চ্যালেঞ্জ করছে আওয়ামী লীগ সরকারকে। এমন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে- এই ধারণা দলটিতে জোরালো হলেও অনেকেই মনে করছেন ওবায়দুল কাদেরই হতে পারেন সাধারণ সম্পাদক।
সম্পাদকের পদ ছাড়াও বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সব পদ নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই। নতুন কমিটিতে বর্তমান কমিটির কারা কারা ঠাঁই পেতে পারেন আর বাদ পড়তে পারেন তা নিয়েও আছে জোরালো আলোচনা।
সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন কারা
দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হওয়ার কোনো বিধান নেই। ফলে কেউ নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করতে পারেন না।
তবে আগ্রহীরা দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ দলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের অনেকে নিজে থেকেই উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে দলের কোন্দল মেটাতে ভূমিকা রাখছেন।
সম্পাদক পদের জন্য আগ্রহীরা নিজের সাংগঠনিক তৎপরতা এবং দক্ষতা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে দেখানোর চেষ্টায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২০১৬ সালের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে এই পদে দায়িত্ব পান। এখন তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আবার এই পদে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী, এমন ধারণা দলের ভেতরে রয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় ৯ম সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নাম আলোচনায় ছিল। এবার ড. রাজ্জাকের নাম আলোচনায় এসেছে এবং তিনি আগ্রহী বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমানও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী হয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নাম আলোচনায় রয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের একটা অংশ মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে দলের কার্যক্রম চাঙ্গা রাখা এবং বিরোধী দল মোকাবিলায় সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদধারীরা যাতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয় বিবেচনা করে সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হতে পারে।
অনেকেই মনে করছেন, তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে ওবায়দুল কাদেরই সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক করতে পারেন। সেজন্য দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরেও বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এই নেতা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ মতিয়া চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডর্ডকে বলেন, 'শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, আরো অনেক ইস্যু আছে, যেগুলো বিবেচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেবেন শেখ হাসিনা। তবে নির্বাচন কেন্দ্রিক ইস্যু সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য গুরুত্ব পেতে পারে।'
তিনি বলেন, 'দলের অনেক নেতাই সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য যোগ্য। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি বিশ্বাস, শেখ হাসিনার প্রতি শতভাগ আনুগত্য, অতীতের রেকর্ড ও নেতৃত্বের গুণাবলী বিবেচনায় সম্পাদক পদে একজনকে মনোনয়ন দেবেন শেখ হাসিনা।'
'কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে জানা যাবে এই কাঙ্ক্ষিত পদে যোগ্য ব্যক্তির নাম', যোগ করেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, 'সম্মেলনে কাউন্সিলর হিসাবে যারা অংশ নেন, তারা দলীয় নেত্রীর ওপর সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পদে নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। তখন কাউন্সিলরদের চিন্তাকে ধারণ করে দলের নেত্রী গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নির্বাচন করে থাকেন।'
তবে আওয়ামী লীগের অন্য একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক পদেও ভোটাভুটির নজির নেই।
আওয়ামী লীগ টানা ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার সময় তিনবার দলের জাতীয় সম্মেলন হয়েছে। প্রতিবারই সমঝোতার ভিত্তিতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে।
সভাপতি পদের জন্য কেন শেখ হাসিনার বিকল্প নেই
ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন টিবিএসকে বলেন, ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর বিভিন্ন সময় দলটি ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মধ্যে ভাঙ্গন ঠেকানো, দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং শক্তিশালী সাংগঠনিক অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দলটি এখন উপমহাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলের রূপ লাভ করেছে।'
এই বিশ্লেষক বলেন, উপমহাদেশের ইতিহাসে দলটির টানা তিনবার দেশ পরিচালনায় সরকার গঠন একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
নানা কৃতিত্বের কারণেই শেখ হাসিনার বিকল্প আওয়ামী লীগের সভাপতি পদের জন্য কেউ বিবেচিত নন বলে যোগ করেন ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
প্রস্তুত সম্মেলন স্থল
'উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতবার সম্মেলন ছিল দুইদিনব্যাপী। এবার একদিনের সম্মেলন হবে। প্রথম অধিবেশনের পরে দ্বিতীয় অধিবেশনের আগে নামাজ ও খাওয়ার জন্য একটা বিরতি হবে। তারপরই দ্বিতীয় অধিবেশনে ৭ হাজার কাউন্সিলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি হবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এবারের কাউন্সিলে কমপক্ষে ১ লাখ লোকের সমাবেশের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এবারের কাউন্সিলে মঞ্চটা হচ্ছে নৌকার আদলে।