চালু হলো দেশের প্রথম মেট্রোরেল পরিষেবা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম মেট্রোরেল সার্ভিসের উদ্বোধন করায় নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।
আজ সকাল ১১টায় উত্তরা সেক্টর-১৫ এর খেলার মাঠ থেকে প্রকল্পের প্রথম ধাপ উত্তরা-আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী একটি স্মারক ডাকটিকিট ও একটি নোট উন্মোচন করেন।
ভারত ও পাকিস্তানের পর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের তৃতীয় দেশ যেখানে মেট্রোরেল রয়েছে। ভারত ১৯৮৪ সালে কলকাতায় প্রথম ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল চালু করে। অন্যদিকে পাকিস্তান দুবছর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে লাহোরে মেট্রোলাইন চালু করে।
৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত এই পরিষেবা আগামীকাল থেকে নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার বলেন, মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পৌঁছাতে এখন সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট; আর সব স্টেশন চালু হওয়ার পর ১৭ মিনিট লাগবে।
আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল রুটের কাজ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এবং মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে বলেও জানান তিনি। মেট্রোরেল প্রকল্প শেষ হলে উত্তরা থেকে কমলাপুরের দূরত্ব হবে ২২ কিলোমিটার।
মেট্রোরেলের করণীয় ও বর্জনীয়
যাত্রীদের উদ্দেশ্যে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মেট্রো স্টেশনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ধূমপান বা যেকোনো ধরনের খাদ্যগ্রহণ।
মেট্রো ট্রেন, প্ল্যাটফর্ম এবং পুরো স্টেশন এলাকা ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ, মেট্রোরেলে ভ্রমণের সময় যাত্রীরা ধূমপান করতে পারবেন না। তাছাড়া, প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশনে যেকোনো ধরনের পানাহার (খাওয়া-দাওয়া) নিষিদ্ধ থাকবে। পান খাওয়া, যেখানে-সেখানে পানের পিক ফেলাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া মেট্রো স্টেশনে থুথু বা কোনো ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না।
মেট্রো রেলে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ থাকছে যেকোনো ধরনের পণ্য ফেরি করা। আগ্নেয়াস্ত্র বহন, পোষা প্রাণী বহন, বিপজ্জনক পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি নিষিদ্ধ থাকবে ভারী ও বড় আকারের মালামাল পরিবহনও।
মেট্রোরেলে নারীদের কোচে পুরুষ যাত্রীদের ওঠাও নিষিদ্ধ থাকবে। একইসঙ্গে প্রতিটি কোচে থাকা বয়ষ্ক এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সিটেও অন্যরা বসতে পারবে না। একাধিক সিট দখল করে বসাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, ড্রাইভিং ক্যাবে ঢোকা যাবে না। দুই কোচের মাঝখানে চলাচলের পথে দাঁড়ানোও যাবে না।
সার্বিক বিবেচনায় স্টেশনের সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে পোস্টার, ব্যানার ও দেয়াল লিখনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
টিকিট কিনবেন যেভাবে
রেললাইনের পাশে স্বল্প দূরত্বে স্থাপিত তিনতলা বিশিষ্ট স্টেশনের দ্বিতীয় তলা থেকে যাত্রীদের টিকিট কিনতে হবে। তৃতীয় তলা থেকে মেট্রোরেলে উঠবেন যাত্রীরা।
প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার পথ অতীক্রম করবে মেট্রো। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর আবারও টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্ম ছাড়তে হবে যাত্রীদের।
প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারণের পাশাপাশি, মেট্রোরেলের ন্যূনতম ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা।
সিঙ্গেল জার্নি টিকিট (একবারই ব্যবহার করা যাবে) এবং এমআরটি পাস ব্যবহার করে মেট্রো ট্রেনে ভ্রমণ করা যাবে।
তাছাড়া, টিকিট ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম) থেকে সিঙ্গেল জার্নি টিকিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেনা যাবে। যারা টিভিএম ব্যবহার করতে পারবেন না, তারা টিকিট মেশিন অফিস (টিওএম) এর কাউন্টারে থাকা বিক্রেতার সাহায্যে টিকিট কিনতে পারবেন।
দুটি কাউন্টার থেকে একবারে সর্বোচ্চ পাঁচটি টিকিট কেনা যাবে।
এমআরটি পাসধারী যাত্রীরা পাস-পেইড জোনের প্রবেশদ্বারে নির্ধারিত স্ক্যানারে তাদের পাস স্ক্যান করে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে পারেন। গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছানোর পরে কার্ডটি আবার স্ক্যান করতে হবে তাদেরকে, স্টেশন থেকে বের হওয়ার আগে নির্ধারিত ভাড়া কেটে নেওয়া হবে।
সিঙ্গেল জার্নি টিকিটের ক্ষেত্রে, একটি এমআরটি পাস প্রদান করা হবে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে এই কার্ড পাঞ্চ করে স্টেশন ত্যাগ করবেন যাত্রীরা।