কাপ্তাইয়ে হচ্ছে ৭.৬ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় ৭ দশমিক ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে (অন গ্রিড) গিয়ে যুক্ত হবে।
গত ২৮ নভেম্বর পিডিবির বোর্ড সভায় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবনাটি অনুমোদন হয়েছে। এরপর গত ২৮-৩০ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের একটি দল বর্তমানে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য স্থান পরিদর্শন করেছেন।
কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার ভেতরে ২০১৯ সালে ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি ছিল দেশের প্রথম অন গ্রিড সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র (উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়)। এর ধারাবাহিকতায় আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত প্রাথমিক কার্যক্রম সমন্বয় করছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার ব্রিক ফিল নামের একটি স্থানে ২৩ দশমিক ০৬ একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে নতুন প্রকল্পের জন্য। ইতিমধ্যে নির্ধারিত স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে উন্নয়নের কাজ চলছে। তবে এখনো প্রকল্প ব্যয়, বিস্তারিত পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়নি।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আবদুজ্জাহের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পিডিবির বোর্ড সভায় এটি অনুমোদন হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি দল স্থান পরির্দশন করেছে। প্রাথমিকভাবে একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।"
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (ভৌত অবকাঠামো বিভাগ) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে সরকার পরিকল্পনা করছে। আমাদের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হচ্ছে। এজন্য চালু থাকা ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। সেখানে নতুন করে স্থাপন উপযোগী জায়গা আছে কিনা, এসব পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।"
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের অন্তত ৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। এরপর ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। কিন্তু কোনোটিই পূরণ হয়নি। পরে ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। বর্তমানে মাত্র ৩ শতাংশের কম বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২১ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সৌর বিদ্যুৎ খাত থেকে আসে ২৫৯ মেগাওয়াট। এটি মোট উৎপাদনের ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। সৌর ছাড়া দেশের নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের খাতের মধ্যে রয়েছে পানি ও বায়ু বিদ্যুৎ। অথচ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি-৭ মতে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ১২ শতাংশ নবায়নযোগ্য করার শর্ত রয়েছে।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) ও ইউএনডিপির তত্ত্বাবধানে তৈরি 'ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ ২০২১-৪১' এর মতে, জমির স্বল্পতা সত্ত্বেও সৌর বিদ্যুতায়নের মধ্যমানের কৌশলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এক্ষেত্রে নদী অববাহিকা উন্নয়নের ৫ শতাংশ ভূমি, শিল্পাঞ্চলের রুফটপসহ অপরাপর অব্যবহৃত ভূমি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সৌর মডেলে এই সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছানো সম্ভব।
জমির স্বল্পতার মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে দেশের চালু থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্র বা পিডিবির অব্যবহৃত জমিগুলো কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার অনুকূল পরিবেশ থাকায় ২০১৯ সালে পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৯ দশমিক ৫ একর জায়গাজুড়ে ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছিল পিডিবি। ১১১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৯ সালের মে মাসে উৎপাদনে গেছে। এখানে ৩১০ ওয়াটের ২৪ হাজার সোলার প্যানেল রয়েছে। এছাড়া উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার উপযোগী করতে ৩০ হাজার ওয়াটের ২৪০টি ইনভার্টার রয়েছে। এটিও বর্তমানে পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের তত্ত্ববধানে পরিচালিত হচ্ছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একজন প্রকৌশলী টিবিএসকে বলেন, "বর্তমানে চালু থাকা সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ২৬ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এর সৌর প্যানেলগুলোর মেয়াদ ২৫ বছর এবং ইনভার্টারের ওয়ারেন্টি ১০ বছর। এ হিসেব করলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ১৪ টাকা দাঁড়ায়। নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আরো আধুনিক প্রযুক্তির হবে। এতে প্রতিদিন গড়ে ২৮-৩০ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এজন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ৮ টাকার মতো পড়বে।"