কাপ্তাই হ্রদে বন্ধ মাছ আহরণ, আয়-অবতরণ কিছুটা কম
৩০ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে ফের তিন মাসের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে মাছ আহরণ, বিপনন ও বাজারজাতকরণের পুরো প্রক্রিয়া।
বছরের এই সময়টায় হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় বন্ধ রাখা হয় মাছ আহরণ। সেইসাথে পানি বাড়া শুরু করতেই হ্রদের জলে ছাড়া হয় কার্পজাতীয় মাছের পোনা।
মাছ বন্ধের ঘোষণায় বরাবরের মতই বলা হয়েছে,আগামী তিন মাস (মে,জুন এবং জুলাই) বন্ধ থাকবে মাছ আহরণ, এই সময়ের মধ্যেই হ্রদের পানি প্রত্যাশিত উচ্চতায় না পৌঁছালে বাড়তে পারে এই সময়সীমা। সাধারণত খুব একটা ব্যতিক্রম না হলে নিয়মের ব্যত্যয় হয় না খুব একটা।
মাছ ধরা বন্ধকালীন সময়ে হ্রদের উপর নির্ভরশীল ২২ হাজার জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে সরকার। পরিবারপ্রতি মাথাপিছু ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।
বিগত এক বছরে কেমন ছিলো হ্রদে মাছ আহরণ ও এ থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব,তা পর্যালোচনা করে যে চিত্র মিলেছে তা খুব একটা আশাপ্রদ নয়।
হ্রদের মাছের দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মৎস উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) হিসাব বলছে, গত পাঁচ বছরের তুলনায় কমেছে হ্রদে মাছ আহরণ ও প্রতিষ্ঠানটির আয়ও।
রোববার প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাওয়া এক হিসেবে দেখা গেছে, গতকাল শেষ হওয়া মৎস আহরণ মৌসুমে ৬৫০৪ মেট্রিন টন মাছ তাদের বিভিন্ন ঘাটে অবতরণ করেছে, যার মাধ্যমে আর্থিক আয় ছিলো প্রায় ১১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। একই সময়ে শুকনা মাছ (শুটকি) আহরিত হয়েছে ৩৫৮ মেট্রিক টন, যার মাধ্যমে আর্থিক আয় প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা। যা বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বিএফডিসির হিসাব বলছে,ঠিক পাঁচ বছর আগে ২০১৭-১৮ আর্থিক সালে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ল্যান্ডিং ঘাটে মাছ অবতরণ করেছিলো ৮১১৫ মেট্রিক টন,যার রাজস্ব আয় ছিলো ১২ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা। পরের দুই বছর ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ সালে অবতরণ ও আয় দুই'ই বাড়লেও ২০২০-২১ সালে অবতরণ কমলেও রাজস্ব আয় ছিলো বেশি ! তবে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থসালে কাপ্তাই হ্রদে মাছ অবতরণ ও আয় দুই-ই বেশ কমেছে।
তবে এই কমের পেছনে গত বছরে বাড়তি প্রায় ২১ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকা কিছুটা দায়ী। এ বছরের শুরুতে দশ দিন পরে শুরু হয় মাছ বন্ধের কার্যক্রম, আবার খোলাও হয় নির্ধারিত সময়ে প্রায় ১১ দিন পরে। ফলে বাড়তি প্রায় ২১ দিন বন্ধ ছিলো মাছ আহরণ ও অবতরণ। এই কারণেই হ্রদে এই বছর আহরণও আয় কম বলে মানছেন বিএফডিসির ব্যবস্থাপক কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি বলছেন, 'আমরা যে ২১ দিন সময় কম পেয়েছি তার কারণেই আমাদের বার্ষিক অবতরণ ও আয়ে কিছুটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এটা সামগ্রিক চিত্র নয়। আর গতকালই যেহেতু মাছ আহরণ শেষ হয়েছে সর্বশেষ দিনগুলোর পুরো তথ্য এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। সেটা পেলে হয়ত দেখা যাবে, গত বছরের তুলনায় পার্থক্য খুব একটা বেশি থাকবে না। তবে কমই থাকবে এটা নিশ্চিত।'
সাধারনত কাপ্তাই হ্রদে বিএফডিসির পাঁচটি অবতরণ কেন্দ্রের মাধ্যমে মাছ পৌঁছে যায় জেলাবাসীসহ সারাদেশের মানুষের কাছে। এর বাইরে জেলেদের হাত ধরে স্থানীয় ছোটবড় বাজারে কিছু মাছ পাওয়া গেলেও মূলত অবতরণ কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে যে মাছ আহরিত হয়,সরকারিভাবে তারই হিসাব রাখে বিএফডিসি।