ফেব্রুয়ারিতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ যাবে কুতুবদিয়ায়
স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো বিদ্যুতের আওতায় আসছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ ও নিঝুম দ্বীপ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে কুতুবদিয়া। মার্চ-এপ্রিল মাসে হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপে বিদ্যুৎ যাবে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি) থেকে।
দেশব্যাপী শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে ২০২০ সালে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে 'হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন' প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প পরিচালক বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পুরো প্রকল্পের কাজ ৭৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় মালামাল দেশে আসতে একটু দেরি হয়েছে।"
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, প্রকল্পটির আওতায় তিনটি দ্বীপে মোট ৭২০ কিলোমিটার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এ কাজের প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত ৩৩ কেভি রিভার ক্রসিংসহ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। মগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া ৫ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট সাবমেরিন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে একটি লাইনের ৩ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। বাকিটুকু সম্পন্ন হতে ফেব্রুয়ারীর শেষ নাগাদ সময় লাগবে। একই সময়ে সাবমেরিন স্টেশন চালু করা হবে। এছাড়া রয়েছে কুতুবদিয়ায় দুই কিলোমিটার ওভার হেডলাইন ও বিতরণ লাইন।
কুতুবদিয়ার প্রায় ২১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বর্তমানে প্রায় ২ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এখানে ১৯৮০ সালে জেনারেটরের মাধ্যমে প্রায় ৬০০ গ্রাহকের মধ্যে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভাঙায় সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময় স্বল্প আকারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ২০০৫ সালে দেড় কিলোমিটার লাইন মেরামত করে দুটি জেনারেটরের মাধ্যমে উপজেলা সদর ও কিছু এলাকায় সন্ধ্যার পর কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পিডিবি। এছাড়া ২০০৮ সালে কুতুবদিয়ায় ১ মেগাওয়াট সক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও তেমন কাজে আসেনি। এটিও বন্ধ রয়েছে।
প্রকল্পটির আওতায় নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে তিনটি সাব স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে একটির কাজ সম্পন্ন হয়ে গত ১১ নভেম্বর চালু হয়েছে। বাকি দুটি সাব স্টেশনের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। হাতিয়া থেকে ১১ কেভি সাবমেরিন লাইনের মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপে বিদ্যুৎ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই হাতিয়ায় ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটা আইপিপি বা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে। হাতিয়ায়ও জেনারেটরের মাধ্যমে সামান্য কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়া হতো। এছাড়া সামর্থবানরা সোলার ব্যবহার করে। বাকি মানুষ অন্ধকারে। দুই হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় প্রায় ৫ লাখ মানুষের বসবাস।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, "ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কুতুবদিয়ার মানুষ বিদ্যুৎ পাবেন। হাতিয়ায় একটি সাব স্টেশন চালু হয়েছে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু শীতকাল হওয়ায় গ্রাহক লোড তৈরি হচ্ছে না বলে পুরোপুরি চালু করা যাচ্ছে না। আশা করছি, মার্চের শেষের দিকে আইপিপি চালু করা যাবে। আর এপ্রিল-মে মাসে নিঝুম দ্বীপেও বিদ্যুৎ যাবে বলে আশা করছি।"
তিনি আরো বলেন, "প্রাথমিকভাবে কুতুবদিয়ায় ৩০ হাজার, হাতিয়ায় ৩৫ হাজার ও নিঝুম দ্বীপে প্রায় ৪ হাজার গ্রাহক সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব সংযোগের মাধ্যমে পুরো জনসংখ্যাকে বিদ্যুতের আওতায় আনা যাবে।"