জন্ম-মৃত্যু-বিয়ের অনুষ্ঠানেও কর গুনতে হবে চট্টগ্রাম নগরবাসীকে
জন্ম, বিয়ে বা মৃত্যু উপলক্ষে যদি অনুষ্ঠান করতে হয় তাহলে এখন থেকে কর দিতে হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকার বাসিন্দাদের। নতুন এই কর নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, এ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
শুধু জন্ম-মৃত্যু উপলক্ষে অনুষ্ঠান নয়; চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৮তম সাধারণ সভায় কর তফসিল অনুযায়ী, রাজস্ব আদায়যোগ্য ২৬টি খাতে কর আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গৃহকরসহ ১০টি খাতে কর আদায় করতো সংস্থাটি।
চসিকের অর্থ ও সংস্থাপনবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজস্ব আদায়যোগ্য ২৬টি খাত থেকে কর আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেসব খাতে করহার নির্ধারণে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। আগামী সভায় করহার নির্ধারণ করা হবে।"
সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজস্ব আদায়যোগ্য ২৬টি খাত হলো- জন্ম, বিয়ে, দত্তক গ্রহণ ও মৃত্যু পরবর্তী জেয়াফত বা মেজবানের ওপর কর, ইমারত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের আবেদনের ওপর কর, নগরীতে ভোগ, ব্যবহার বা বিক্রয়ের জন্য পণ্য আমদানির ওপর কর, নগর থেকে পণ্য রপ্তানির ওপর কর, নগরে চলাচলরত যানবাহন থেকে টোল, পশুর ওপর কর, জনসেবামূলক কার্য সম্পাদনের কর, পানি কল ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য কর, স্কুল ফি, বাজারের ওপর ফি, করপোরেশন থেকে লাইসেন্স, অনুমোদন ও অনুমতির ওপর ফি, করপোরেশনের কোনো বিশেষ কাজের জন্য ফি, আদর্শ কর তফসিলের আওতায় অনুমোদিত অন্য কোনো ফি ও সরকারের আইন বলে আরোপনীয় অন্য কোনো কর।
এসব খাতের মধ্যে জন্ম, বিয়ে, দত্তক গ্রহণ ও জেয়াফত বা মেজবানের ওপর কর আদায়ের হার নির্ধারণ করতে সিটি করপোরেশনের অর্থবিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তবে চসিকের সাবেক প্রশাসক ও নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চট্টগ্রামের মানুষ ভোজন প্রিয়, খাওয়াতেও ভালোবাসে। তাই সন্তানের জন্ম বা স্বজনের মৃত্যু ও বিয়েতে জেয়াফত বা মেজবানের আয়োজন করে। মেজবান চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, এমন একটি সামাজিক আয়োজনে করারোপের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই যৌক্তিক না।"
তিনি আরও বলেন, "সিটি কর্পোরেশনের যদি আয় বৃদ্ধি করই হয় তাহলে তারা কমিউনিটি সেন্টারগুলো থেকে বর্জ্য অপাসারণের জন্য সার্ভিস চার্জ চাইতে পারে। মানুষের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে অন্যান্য খাত থেকে অর্থ আদায় করে করপোরেশন স্বাবলম্বী হতে পারে।"
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আদর্শ কর তফসিল ২০১৬ অনুযায়ী কর আদায় করে থাকে। এর মধ্যে ভবনের ভাড়ার ভিত্তিতে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত গৃহকর আদায় করা হয়। এছাড়াও ট্রেড লাইসেন্স ফি, ভূমি হস্তান্তর ফি, বিজ্ঞাপন কর, শপ সাইন, চলচ্চিত্র ও বিনোদন কর, যান্ত্রিক যানবাহন ফি, অযান্ত্রিক যানবাহন ফি, রিকশা লাইসেন্স ফি, এস্টেট ও বিবিধ।
নতুনভাবে করের আওতায় আনা হচ্ছে ইমারত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণও। এ জন্য আবেদনের ওপর কর আদায় বিষয়ে যাচাই-বাছাই করছে সিটি করপোরেশনের আইন বিভাগ। এছাড়া বাজারের ওপর ফি, নগরীতে ভোগ, ব্যবহার বা বিক্রয়ের জন্য পণ্য আমদানি ও নগর থেকে পণ্য রপ্তানির ওপর কর আদায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নগরবাসী দিশেহারা। এর মাঝেই বিদ্যুৎ, গ্যাস, বাড়ি ভাড়া ও পানি দাম বেড়েছে। চলতি অর্থবছর থেকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে গৃহকর আদায় করছে চসিক। এ অবস্থায় চসিকের নতুন নতুন খাতে কর আদায় মানুষের দুর্দশা বাড়বে।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চসিকের আয়ের খাত খুব সীমিত। কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাসহ খচরাদি সম্পন্ন করতে সমস্যা পোহাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের রাজস্ব আইনে থাকা ২৬ খাত থেকে কর আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।"
"অনেকেই করের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমালোচনা করছেন। আমরাও এসব বিষয় যাচাই বাছাই করছি। যাই করা হোক, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে কর নির্ধারণ করা হবে। নতুন কর আদায় যাতে সহনীয় পর্যায়ে করা হয়, আমরা সে চেষ্টা করছি।"