গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, সিরামিকস পণ্যে ব্যয় বাড়বে ৩০%
গ্যাসের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল সিরামিক খাত। নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে সিরামিক টাইস, টেবিলওয়্যার, স্যানিটারি ওয়্যার পণ্যভেদে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন ব্যয় বাড়বে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "গ্যাস সিরামিক শিল্পের কাঁচামালের অন্যতম প্রধান উপকরণ। সিরামিক পণ্যের মোট উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ১২ শতাংশ যায় এই গ্যাসের পেছনে।"
"কিন্তু গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও তৈরি করা পণ্যের মূল্য ইচ্ছামতো বাড়ানো যায় না। ফলে উৎপাদকেরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।"
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে শিল্প খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য প্রায় ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তখনই সিরামিক পণ্যের গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ।
"২০২২ সালে দুই দফায় আরো প্রায় ৪০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এখন নতুন করে ১৫৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি আমাদের মহা বিপদে ফেলে দিচ্ছে। এর ফলে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সার্ভাইভ করা কঠিন হবে।"
ইরফান উদ্দিন আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে কাঁচমালের দাম কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। ডলার কারণে আরো ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
"লোকাল মার্কেটে বিক্রিতে ডেলিভারি চার্জ, মার্কেটিং কস্ট, লেবারদের কষ্টও বেড়েছে। তবে পণ্যের দাম বাড়েনি। ফলে ভবিষ্যতে রিকভারির আশায় লোকসান দিয়ে টিকে আছি।"
দেশে এখন ৭০টি সিরামিক কারখানা (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার) আছে। এসব কোম্পানিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আছে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এই খাত প্রতি বছর রপ্তানি করে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পণ্য। সরকারকে রাজস্ব দেয় প্রায় ৩ হাজার কোটি আর গ্যাস বিল দেয় প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ না হলে নতুন কর্মসংস্থান তো হবেই না, উল্টো শ্রমিক ছাঁটাই করতে হবে।
বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, "গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কোম্পানিগুলো উৎপাদন করতে পারছে না। জেনারেটর ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ ২০ শতাংশের মতো বেড়েছে। নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি লোকসান আরো বাড়াবে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা প্রতিযোগিতা হারাবো।"
তিনি বলেন, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে সিরামিক খাত প্রায় আমদানি বিকল্প শিল্প খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু গ্যাসের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাসনির্ভর এই শিল্পের উদ্যোক্তারা ব্যবসা হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন।
বিদেশি সিরামিক পণ্যের বিপরীতে দেশীয় পণ্য বাজার হারাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সিরাজুল ইসলাম।
শাইনপুকুর সিরামিক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির এফ সি এ বলেন, "দেশে টেবিল ওয়্যার উৎপাদনের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান শাইনপুকুর সিরামিকস। কিন্তু গ্যাসের এ মূল্যবৃদ্ধি আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিবে আমাদের কোম্পানিকে।"
তিনি বলেন, "ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই আন্তর্জাতিক বাজারে ফ্রেইট চার্জ বাড়তে শুরু করে। এই সময়ের মধ্যে কাঁচামালের দাম কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। অন্যান্য অপারেশনাল খরচ কমেছে কমপক্ষে ২০ শতাংশ। নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে এই খরচ আরো ১৩-১৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।"
তিনি বলেন, "সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। তবে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আমরা গত জুন থেকেই গ্যাস প্রেসার উৎপাদন উপযোগী পাচ্ছি না। অন্যদিকে গ্যাস না পেয়েও দ্বিগুণ বিল দিতে হচ্ছে। এমনটি হলে শিল্প কারখানা টিকে থাকা সম্ভব নয়।"