শব্দ দূষণের ফলে ২০% মানুষ হতাশা, বিষণ্ণতায় ভুগছে: বিশেষজ্ঞরা
শব্দ দূষণের জন্য ২০ শতাংশ মানুষ হতাশা ও উদ্বেগে ভুগছে। মানুষের চেয়ে বন্যপ্রাণীর ক্ষতি বেশি হচ্ছে; শব্দ, বায়ু দূষণের ফলে ঢাকায় কমে গেছে পাখির সংখ্যা।
গাড়িতে শব্দ দূষণ মনিটরিংয়ের জন্য তাই ট্রাকিং ডিভাইস স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আমাদের ব্যক্তিগত গাড়ি, বাসসহ সকল গাড়িতে শব্দের মাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের সাথে দূষণ মনিটরিংয়ের জন্য ডিভাইস স্থাপন করে দিয়ে সেটি ট্রাফিক বিভাগ পর্যবেক্ষণ করলে শব্দ দূষণ নামক নীরব ঘাতক থেকে আমরা অনেকটাই মুক্তি পাবো।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি'র (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে পরিবেশ অধিদপ্তরের 'শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প' এর আওতায় অংশীদারদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভায় বক্তারা একথা বলেন।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, "শব্দের মানমাত্রা বজায় রাখতে আবাসিক এলাকা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা সরিয়ে ফেলতে হবে, অর্থাৎ ভূমির ব্যবহার যেন ঠিক থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও বিআরটিএ থেকে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার সময় মালিক ও ড্রাইভারদের নিয়ে হর্নের ভয়াবহতা নিয়ে সেমিনার করার মাধ্যমে সচেতন করতে হবে। অতিরিক্ত শব্দ দূষণের ফলে আমরা ধীরে ধীরে বধির জাতিতে পরিণত হচ্ছি।"
তিনি আরও বলেন, "নেপাল যদি হর্নমুক্ত সিটি ঘোষণা করতে পারে তবে আমরা কেন পারি না? আমাদের এখানে কিছু একটা হলেই বিদেশে চলে যায়। এসবে টাকা খরচ না করে গাড়িতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত, যাতে সীমার বাইরে শব্দ করলে সেখানে একটা সংকেত দেয় যে কোন গাড়ি শব্দ দূষণের জন্য দায়ী। অতিরিক্ত হর্ন দিলে সেটা যেন সিস্টেমে চলে যায় এবং তারপর ওকে শাস্তির আওতায় আনা যায়।"
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন বলেন, "শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ। এজন্য আমাদেরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে কারণ শব্দ দূষণ একটি নীরব ঘাতক। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আমারা যেভাবে কাজ করছি ঠিক একইভাবে শব্দ দূষণ নিয়ে কাজ করতে হবে। শব্দ দূষণ কারা করছে তা নির্ণয় করে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি।"
তিনি বলেন, "অনেকেই সুপারিশ করেছেন যে, ঢাকার যানজট, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ কমাতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের আধিক্য কমিয়ে এমপি-মন্ত্রীরা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচল করবে। সেক্ষেত্রে দেশের নীতিনির্ধারকদের নিরাপত্তা দিবে কে?"
এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, "১৯৯৫ সাল থেকে এই আন্দোলন করে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে হতাশ লাগে। আজকে ঢাকা শহরে প্রাইভেট কারভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখি। একটা রাস্তার ৭০-৮০ ভাগ গাড়ির দখল থাকে…আমরা পরিবেশ আন্দোলন করি। অথচ আমাদের বাড়িতে এসি, গাড়িতে এসি, অফিসে এসি। আমাদের এমপি-মন্ত্রী যারা, তারা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে না। কিন্তু আমরা প্রাইভেট কারকে বাদ দিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্টকে যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে না গড়ে তুলি, তাহলে এই বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ কমবে না।"
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, সরকারের এনফোর্সমেন্ট কর্তৃপক্ষকে শব্দমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র প্রদান করতে হবে যেন তারা শব্দের তীব্রতা পরিমাপ করে পদক্ষেপ নিতে পারেন। এছাড়াও তিনি শব্দ দূষণ রোধে রাস্তার পাশে গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন।
সভাপতি বক্তব্যে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য স্থপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, "শব্দ খারাপ না। তবে ভুল সময়ে, ভুল জায়গায় শব্দ করা হলে তা দূষণ হয়। দূষণের উৎস মানুষের মন। তাই দূষণ রোধে আমাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। দূষণ রোধে শাস্তির ব্যবস্থা তখনই করতে পারবেন যখন এর জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যাবে।"