আদানি কয়লা বিদ্যুৎ চুক্তির শর্তে সংস্কার চায় বাংলাদেশ: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/02/08/adani.jpg)
ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি পাওয়ার থেকে ক্রয়কৃত বিদ্যুতের ওপর ছাড় চাইছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) স্টক এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
"৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ডের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে আদানি পাওয়ার জানায়, বাংলাদেশ তাদের কাছে 'বিদ্যুৎ চুক্তিতে একটি ছাড় বিবেচনা' করার অনুরোধ জানিয়েছে। মঙ্গলবার স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত হয় চিঠিটি। ২০১৭ সালে সাক্ষরিত হওয়া এ চুক্তি এতদিন গোপন রাখা হয়েছিল," বলা হয় ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, "গোপনীয় ১৬৩ পৃষ্ঠার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির শর্তাবলীর অধীনে, বাংলাদেশ একটি দরিদ্র এবং ভারী ঋণগ্রস্ত দেশ। দেশটি একটি নতুন কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনবে; যা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সচরাচর প্রদত্ত মূল্যকে ছাড়িয়ে গেছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দীর্ঘদিনের মিত্র আদানি নির্মিত।"
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, "অস্বাভাবিক শর্তাবলীর মধ্যে কয়লার মূল্যসীমার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা নেই। এর অর্থ হলো, আদানি চাইলেই বাংলাদেশের কাছে আরো বেশি অর্থ দাবি করতে পারবেন।"
গৌতম আদানি মূলত বিদেশে অবস্থিত তার নিজস্ব কয়লা খনি থেকে নিজস্ব শিপিং নেটওয়ার্ক এবং কয়লা-হ্যান্ডলিং এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি করে থাকেন।
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের পর জ্বালানি ক্রয় নিয়ে আদানি গ্রুপ এবং ঢাকার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ওয়াশিংটন পোস্ট অনুসারে, "এ সফরে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে ভারতীয় ব্যবসার প্রবেশের সুবিধার্থে উল্লেখ্য বিষয়ে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছিলেন।"
ওয়াশিংটন পোস্ট নিজস্ব একটি তদন্তের (গত বছর প্রকাশিত) উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলে, "আদানি পাওয়ার প্রকল্পটি মোদি সরকারের অধীনে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনেক বেশি ট্যাক্স বিরতি এবং আইনি পরিবর্তনজনিত সুবিধা পেয়েছে। যার মাধ্যমে প্রকল্পের ১ বিলিয়ন ডলারের মতো সাশ্রয় হয়েছে।"
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট আরও বলেছে, "সম্প্রতি বাংলাদেশি কর্মকর্তারা আদানির সাথে এ চুক্তির বিষয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন এবং এসব শর্ত সংস্কারের আশা করছেন।"
"কিন্তু চলতি সপ্তাহে ভারতীয় নিয়ন্ত্রকদেরকে পাঠানো চিঠিতে আদানি পাওয়ার বলেছে, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করা হচ্ছে না। আদানির মুখপাত্র বর্ষা চেনানি এ নিয়ে মন্তব্য করতে চান নি। এমনকি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের মুখপাত্রও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হন নি।"
মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গত ২৪ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের ব্যাপক জালিয়াতি নিয়ে অভিযোগ তুলেছে। প্রতিবেদনের পর থেকে আদানির সাতটি ট্রেডিং কোম্পানি স্টক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। বাজারে ১০০ বিলিয়নেরও বেশি ক্ষতি হয়েছে কোম্পানিগুলোর।
যদিও শুরু থেকেই আদানি তার ওপর আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এ সমালোচনা ভারতের উপর আক্রমণের সমান।