বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধে মার্চ থেকে ডলার ছাড় করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/04/p1_highlights.jpg)
আগামী রমজান, গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুম সামনে রেখে বিদ্যুতের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড় করে বকেয়া বিল পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
মার্চ থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর (আইপিপি) পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধে ডলার ছাড়তে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি সীমিত রাখা এবং আসন্ন গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের বর্ধিত চাহিদা পূরণের উপায় নিয়ে সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে টিবিএসকে জানিয়েছেন সংশয় কর্মকর্তারা।
সভাত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নির্বাহীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'ভারতের আদানি গ্রুপ ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এনপিটিসি বিদ্যুৎ ভেপার নিগাম লিমিটেড (এনভিভিএন) ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি অব্যাহত রাখতে বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একইসঙ্গে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা ভর্তুকির অর্থ পরিশোধের বিষয়ও সভায় গুরুত্ব পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে সার আমদানির বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য ডলার ছাড় করা হবে। আর মার্চ থেকে বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধের জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়া হবে।'
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি সীমিত রাখা এবং বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। এজন্য ২,৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটির উৎপাদন সক্ষমতা ১,৩০০ মেগাওয়াট।
পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরসংলগ্ন এলাকার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি সার্বক্ষণিকভাবে চালু রাখতে কয়লাবাহী জাহাজ চলাচল নিরবচ্ছিন্ন রাখার ওপর সভায় জোর দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান টিবিএসকে বলেন, 'গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুম এবং রোজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরতে শীঘ্রই প্রেস কনফারেন্স করা হবে।'
বকেয়া বিল
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বিদ্যুৎ খাতে ছয় মাসের বিল বকেয়া রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রসিউসারস অ্যাসোসিয়েশন-এর সাবেক সভাপতি ইমরান করিম বলেন, গত চার মাসের বকেয়া বাবদ সরকারের কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর পাওনা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল তরল জ্বালানিভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর পাওনা ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এর মধ্যে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা না হলে তেল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা সম্ভব হবে না বলে আগেই সতর্ক করেছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।
গত ডিসেম্বর শেষে ভারতের আদানি গ্রুপ ও এনভিভিএনের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলার। বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ করতে আদানির হুমকির পর সরকার প্রতি মাসের বিল পরিশোধ করলেও পুরনো বকেয়া পরিশোধ করেনি।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, আদানি গ্রুপের বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। কোম্পানিটি গত জানুয়ারিতে এ নিয়ে পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) সঙ্গে বৈঠক করে।
সম্প্রতি পিডিবিকে পাঠানো এক চিঠিতে আগামী জুনের মধ্যে বকেয়া বিল শোধ করার সময় বেঁধে দিয়ে ভারতীয় কোম্পানিটি বলেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ করলে বিলম্ব ফি মওকুফ করা হবে।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানারধীন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। বকেয়া পরিশোধ না করলে কয়লা আমদানি ব্যাহত হবে বলে প্রায়ই সরকারকে সতর্ক করছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।
চলতি শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ১১-১২ হাজার মেগাওয়াট। গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে চাহিদা বেড়ে ১৮ হাজার মেগাওয়াট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডলার ও অর্থ সংকটের কারণে কয়লা, ফার্নেস অয়েল ও গ্যাস আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গত বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে পায়রা, রামপালসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকায় লোডশেডিং বেড়ে গিয়েছিল।