ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার আওতায় আসছে চট্টগ্রামের রিকশা
অবৈধ চলাচল ঠেকাতে ও রাজস্ব বাড়াতে রিকশাকে ডিজিটাল নিবন্ধনের মাধ্যমে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
একই সঙ্গে বন্দরনগরীতে রিকশার সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবছে করপোরেশন। গত আট বছরে নতুন কোনো রিকশা নিবন্ধন করেনি চসিক।
চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তিবরিজ টিবিএসকে বলেন, "ঢাকা সিটি করপোরেশনেও ডিজিটাল প্লেটের রিকশা চালু করা হয়েছে।"
"চসিকের কর তফসিল অনুসারে নিবন্ধন ও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রিকশা নিবন্ধনের জন্য বলা হবে। মানুষের চাহিদার উপর ভিত্তি করে রিকশার সংখ্যাও বাড়ানো হবে," যোগ করেন তিনি।
চসিকের তথ্যমতে, ৭০ লাখ মানুষের বসবাস বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। বর্তমানে এখানে চসিক নিবন্ধিত ৭০ হাজার প্যাডেল চালিত রিকশা ও সাড়ে তিন হাজার ভ্যানগাড়ি রয়েছে। তবে নিবন্ধনবিহনী বা অবৈধ রিকশা ও ভ্যানের সংখ্যা আরো বেশি।
এ বিষয়ে চসিক, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, রিকশা মালিকদের সংগঠন; কারো কাছেই সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। নিবন্ধনহীন রিকশার পাশাপাশি একই নাম্বার প্লেট দিয়ে একাধিক রিকশাও চালানো হয়।
মূলত ২০১৫ সালের পর থেকে নগরীতে নতুন রিকশার নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত রিকশার নবায়ন ফিও আদায় করছে না চসিক।
এবার, নগরীর রিকশাগুলোকে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে কিইউআর সম্বলিত নাম্বার প্লেটের মাধ্যমে ডিজিটাল নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে চসিক।
২০২২ সালের মার্চে কেমিস্ট সিজিডি কনসোর্টিয়াম নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কিইউআর কোড বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
শুরুতে এক লাখ রিকশা ও চার হাজার ভ্যান গাড়ির জন্য কিইউআর কোড বানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কেমিস্ট সিজিডি কনসোর্টিয়ামের ম্যানেজিং পার্টনার মো. হাসানুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, "চসিকের পুরোনো রেজিস্ট্রার থেকে সব তথ্য নিয়ে আমাদের সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে চসিকে চুক্তি হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিবন্ধনের জন্য প্রচার করা হবে।"
"ওয়ার্ড অফিসের সচিবকে পুরাতন লাইসেন্স দেখিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার স্লিপ সংগ্রহ করবেন রিকশা মালিকেরা। এরপর ব্যাংকে নির্ধারিত ফিসহ বকেয়া পরিশোধ করে ডিজিটাল নিবন্ধনের আওতায় আসবে। তখন নতুন করে এনআইডি, ছবিও সংগ্রহ করা হবে।"
"নতুন ব্যবস্থাপনায় অবৈধ রিকশা চালানোর সুযোগ থাকবে না। এক ডিজিটাল প্লেট একাধিক রিকশায় ব্যবহার করা যাবে না। তদারকি সংস্থাকে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও আমরা কাজ করছি," যোগ করেন তিনি।
দুই বছরের জন্য রিকশার ডিজিটাল নিবন্ধনের ফি ৩০০ টাকা, প্রতি বছর রাজস্ব ১০০ টাকা ও নতুন রিকশার নিবন্ধনের জন্য আবেদন ফর্ম বাবদ ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর রিকশা চালকদের পরিচয়পত্রের জন্য প্রতি বছর ৫০ টাকা ফি ও ফর্ম মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভ্যান গাড়ির ক্ষেত্রে সব ফি একই থাকলেও প্রতি বছর রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে ২০০ টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী, রিকশার ডিজিটাল নিবন্ধনের ফি ৩০০ টাকার বিপরীতে ১৪৬ টাকা পাবে কেমিস্ট সিজিডি কনসোর্টিয়াম।
চট্টগ্রাম সিটি রিকশা মালিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ছিদ্দিক মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ডিজিটাল করার উদ্যোগ নিয়ে আমাদের কোন দ্বিমত নেই। তবে শহর থেকে অবৈধ ভ্যাটারি চালিত রিকশা তুলে দিতে হবে।"
তবে একদিকে অবৈধ ইঞ্জিন চালিত অটোরিকশা বন্ধের কথা বললেও অপরদিকে সোলার রিকশার নামে ইঞ্জিন চালিত রিকশা চালুর ঘোষণার বিরোধীতা করেছে রিকশা মালিকেরা।
গত ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত চসিকের সাধারণ সভায় মেয়র রেজাউল করিম বলেন, "অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা উচ্ছেদ করে সোলার বিদ্যুৎ চালিত রিকশা চালু করার বিষয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি দরকার।"
এর আগে ১৮ ডিসেম্বর এসএসএল কোম্পানির পক্ষ থেকে চসিককে দেওয়া দুটি সোলার রিকশা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেন তিনি।
চট্টগ্রাম স্ট্র্যাটেজিক আরবান ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যান ২০১৮ অনুযায়ী, বন্দরনগরীর প্রায় ১৬% মানুষ নিয়মিত রিকশা বা অটোরিকশা ব্যবহার করে, যেখানে শহরের অভ্যন্তরে ১,১৬৯ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১,০১৯ কিলোমিটার রাস্তাতেই এই ধরনের বাহন চলে।