সৌদি আরবে ডিএপি সার কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ
সৌদি-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগে সৌদি আরবে একটি ডি-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার উৎপাদন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে সরকার। উৎপাদন খরচ কমিয়ে সহজে সরবরাহ বাড়ানোর জন্যই এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানিয়েছে, সৌদি আরবে ডিএপি সার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছে সৌদির হানওয়া সৌদি কন্ট্রাক্টিং কোং (এইচএসসিসি)। এ জন্য সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) ও সৌদি কোম্পানিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে এই সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষ হওয়ার কথা।
তবে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সৌদির কোথায় কারখানা স্থাপন করা উপযোগী হবে, বিনিয়োগের পরিমাণ, সার উৎপাদন খরচ, বাংলাদেশে এই উৎপাদিত সার আনলে সেটির খরচ কেমন হবে- এসব বিষয় তুলে আনা হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিসিআইসি) শরীফ মোঃ মাসুদ টিবিএসকে বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্যই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেখানে বিনিয়োগ কতটা যৌক্তিক হবে, তা এই সমীক্ষার মাধ্যমে তুলে আনা হবে।
২০২৪ সালের মধ্যে এইচএসসিসি তাদের অর্থায়নে এই কাজগুলো করবে। বিসিআইসি প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত দিয়ে তাদের সহায়তা করবে। এ সমঝোতা স্মারকের উদ্দেশ্য হলো উভয় পক্ষের মাঝে আলাপ আলোচনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তির পরিকল্পনা তৈরি করা।
চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বিসিআইসির সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সমীর বিশ্বাস এবং এইচএসসিসির পক্ষে সিনিয়র জনসংযোগ পরিচালক আব্দুল আজিজ ডুহাইম।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন জানান, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরের সময় ডিএপি সার কারখানা স্থাপনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
"সে অনুযায়ী সৌদি আরবের উপযুক্ত কোনো জায়গায় একটি ডিএপি সার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে সম্ভাবত্য যাচাইয়ের জন্য এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডিএপি সারের চাহিদা সাড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু চট্রগ্রাম ডিএপি সার কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১ লাখ মেট্রিক টন। বাকি চাহিদা মেটাতে হচ্ছে আমদানি করে। কারণ চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের মতো পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাস নেই বাংলাদেশে।
শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, ডিএপি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল রক ফসফেট ও ফসফরিক এসিডও নেই দেশে। কিন্তু এই উপাদানগুলো সৌদি আরবে সহজপ্রাপ্য। কাজেই সৌদি আরবে কারখানা স্থাপন যৌক্তিক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কারখানা স্থাপন প্রক্রিয়া যৌথ বিনিয়োগে হতে পারে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি আরবে কারখানা স্থাপন করা হলে, সেখানে কম খরচে ডিএপি সার উৎপাদন সম্ভব হবে। পাশাপাশি মুনাফা ভাগাভাগির মাধ্যমে দেশে আমদানি করলে তাতে খরচও কম পড়বে।
সৌদিতে কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনাটি এমন সময় করা হচ্ছে, যখন কিনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সার আমদানি ব্যহত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সারের দাম বাড়ছে। আবার দেশে যে কয়টি ইউরিয়া ও ডিএপি সার কারখানা রয়েছে, সেগুলোও কাঁচামালের অভাবে খুব বেশি উৎপাদন করতে পারছে না। এমন অবস্থায় যৌথ উদ্যোগে সৌদিতে সার কারখানা স্থাপন লাভজনক হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।