ঢাকার মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন ক্ষতিকর মাত্রার অনেক নিচে: বিটিআরসি
রাজধানীর মোবাইল ফোন টাওয়ার ও মোবাইল হ্যান্ডসেট থেকে নির্গত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড (ইএমএফ) রেডিয়েশন আন্তর্জাতিকভাবে বেঁধে দেওয়া মানের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে।
বিটিআরসির সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, বিদ্যমান রেডিয়েশন বা বিকিরণ মাত্রা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।
বিটিআরসি-এর চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, "মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ সম্পর্কে মানুষের ভয় একটি ভুল ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়; কারণ আমরা আমাদের প্রতিবারের জরিপে এখনও ক্ষতিকারক কিছু পাইনি।"
ইএমএফ (একটি বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বক শক্তি)-এর অত্যধিক নির্গমনে লিউকেমিয়া, ক্যান্সার, মস্তিষ্কের টিউমারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি রয়েছে, যা ঢাকার বাসিন্দাদের অন্যতম চিন্তার কারণ। ফলে সেবার মান উন্নত করার লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটররা নতুন টাওয়ার চালু করতে চাইলেই উদ্বেগ দেখা দেয় নগরবাসীর মধ্যে।
কিন্তু ২০২২ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ঢাকার ১২টি এলাকার ৩০টি স্থানে মাঠ জরিপ চালানোর পর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর টাওয়ার থেকে নির্গত রেডিয়েশন আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত সীমার মধ্যেই রয়েছে।
বিটিআরসি প্রধান বলেন, "জরিপকৃত এলাকায় রেডিয়েশনের পরিমাণ আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাই এতে সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।"
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রোটেকশন (আইসিএনআইআরপি), ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) এর মান অনুযায়ী, ইএমএফ এক্সপোজার বা নির্গত হওয়ার নিরাপত্তা সীমা প্রতি মিটার বর্গক্ষেত্রে ২.১০৬ মিলিওয়াট (এমডব্লিউ/এম২)।
রাজধানীর আগারগাঁও, তেজগাঁও, সংসদ ভবন এলাকা, আদাবর, মোহাম্মদপুর, গুলশান, বনানী, রামপুরা, খিলগাঁও, বাড্ডা এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ে চালানো মাঠ পর্যায়ের জরিপে দেখা গেছে, এসব এলাকায় বিকিরণ মাত্রা ০.৫ এমডব্লিউ/এম২-এর নিচে।
জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত ভুল ধারণা অনুযায়ী, সেলফোন টাওয়ার থেকে নির্গত রেডিয়েশন পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব, জন্মগত ত্রুটি এবং ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করে। অথচ এসব ধারণার পিছনে কোনো শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
গত অক্টোবরে, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রচলিত এই ভুল ধারণার কারণে মোবাইল অপারেটরদের ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নতুন সেলফোন টাওয়ার স্থাপনে নানান ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এতে করে মূলত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন মোবাইলফোন ব্যবহারকারীরাই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রাহক পর্যায়ে সেবার মান আরও উন্নত করতে মোবাইল অপারেটরদের রাজধানীজুড়ে অন্তত আরও ৫০০টি টাওয়ার (বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন) স্থাপনের প্রয়োজন।