গৃহকর বাতিলের দাবি: চট্টগ্রামে সুরক্ষা পরিষদের নগর ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে বাধা
'গলাকাটা' গৃহকর বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় (নগর ভবন) ঘেরাও কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ। বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে পরিষদের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নগর ভবনের কয়েকশ মিটার দূরে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে আসেন। সেখানে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
পরে পরিষদের নেতা-কর্মীরা টাইগারপাস মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে তাদের অবস্থানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। তারা চলে যাওয়ার সময় সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে স্লোগান দেন। পরে পরিষদের চার নেতাকে নগর ভবনে যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ। সেখানে গিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দেন তারা।
স্মারকলিপিতে ঘর ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর মূল্যায়ন পদ্ধতি বাতিল, পূর্বের ন্যায় আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ চালু, আপিলের নামে ঘুষ আদারেয়র সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রতি বছর গণশুনানি আয়োজন করে নগরবাসীর অভিযোগ বলার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল আবছার বলেন, "সকালে (গতকাল) চসিক ভবনে যাওয়ার পথে আমাদের তিন দফায় বাধা দিয়েছে পুলিশ। আমরা টাইগারপাস মোড়ে অবস্থান নিয়েছিলাম। পরে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে এসে আমাদের অবস্থান কর্মসূচিতে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। এরপর পুলিশ আমাদের সিটি করপোরেশন নিয়ে যায়। মেয়র কার্যালয়ে থেকেও আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। প্রধান নির্বাহী স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন।"
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নোবেল চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, "নগর ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। তাই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পরিষদকে নগর ভবনে যেতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ দুই পক্ষের মধ্যখানে অবস্থান নেয়।"
এর আগে বুধবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে নগরের কদমতলীর আবুল খায়ের মার্কেট চত্বর থেকে মিছিল বের করে পরিষদ। মিছিলটি নগরের কদমতলী মোড়, দেওয়ানহাট হয়ে দুপুর ১২টার দিকে টাইগারপাস মোড়ে আসে।
মূলত কর পুনর্মূল্যায়নে সিটি করপোরেশন করবিধি ১৯৮৬-এর ২০ ধারা অনুযায়ী ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের বিষয়টি অনুসরণ করা হয়েছে। ওই সময় সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন মাহমুদুল হাসান চৌধুরী। তিনিও এটি বাস্তবায়ন করেননি। চসিকে আয়তন হিসেবেই গৃহকর আদায় হয়ে আসছিল এতো বছর। ২০১৬ সালের ২১ মার্চ গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ওই সময় আন্দোলনসহ ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়েছিল সিদ্ধান্ত। এই আন্দোলনে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীও মাঠে নেমেছিলেন। উচ্চ আদালতে রিটসহ বিভিন্ন বিরোধিতার মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরপর চসিকের চিঠির প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছর থেকে বাড়ি ভাড়া হারে গৃহকর আদায় করা হচ্ছে।
এই গৃহকর আপিলে কমিয়ে দেওয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্য হচ্ছে। গত বছরের ২৪ অক্টোবর চসিকের বর্ধিত গৃহকর কমানোর জন্য ঘুষ আদায়ের দায়ে রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। এছাড়া আরো ১০ জনকে শোকজ করা হয়। চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ গত বছরের ১৫ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে ২০০ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ সামনে আনে। বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমে ১২ জনের একটি তালিকা দেয় মেয়রকে।
চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, "চসিকের বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে ২০১৭-১৮ সালে যখন এসেসমেন্ট হয়েছে তখন তো আমি মেয়র পদে দায়িত্বে ছিলাম না। তখন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে আপত্তি তোলায় সরকার সে সময়ে এসেসমেন্ট স্থগিত করেছিলো। আমি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পরে সরকারের নির্দেশে সেই এসেসমেন্টকে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সুতরাং এই হোল্ডিং ট্যাক্সের নীতিমালা আমি মেয়র তৈরি করিনি। সরকার যেভাবে ঠিক করেছে সেভাবে চলছে।"
তিনি আরো বলেন, "এখন যে সংগঠন চসিকের কাছে দাবি তুলছেন তারা সরকারের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলে সব থেকে ভালো হয়। বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর জন্য আাপিলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যৌক্তিক কারণ বিবেচনা করে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনরায় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নগরবাসীরাও তো খুশি হচ্ছেন। আমার মনে মনে একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে আন্দোলন করছে।"
এদিকে বুধবার সকালে ৯টার সময় করদাতা সুরক্ষা পরিষদের চসিক ভবন ঘেরাও কর্মসূচি থাকায় নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা দেয় চসিক কর্তৃপক্ষ। এসময় ভবনে তালা দেওয়ায় প্রায় দুই ঘণ্টা কেউ বাইরে বের হওয়া কিংবা ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি। চসিকের অনেক কর্মকর্তাকেও এসময় বাইরে অবস্থান করতে দেখা গেছে। চসিকের ইতিহাসে প্রধান ফটকে এভাবে তালা মেরে দেওয়া আগে কখনো ঘটেনি বলে জানান কর্মকর্তারা।