সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে বহিরাগত যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা ভোট দিয়েছে: বিএনপি সমর্থিত প্যানেল
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির 'একতরফা' নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের বহিরাগত, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভিাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তিনি বলেন, 'গত ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৫০০ আইনজীবীও ভোট দেয়নি। এখানে আইনজীবীদের ক্লার্করা ভোট দিয়েছে। এখানে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ভোট দিয়েছে। পুলিশের কারণে কোনো আইনজীবী ভোট দেওয়ার জন্য বুথে ঢুকতে পারে নাই। যিনি ভোট দিতে গিয়েছেন, তিনিই পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন।'
খোকন বলেন, 'আমরা সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী দুইজনই পুলিশের হামলার শিকার হয়েছি। সমিতির বর্তমান কার্যকরী পরিষদের সদস্যরাও হামলার শিকার হয়েছে। ভোটকেন্দ্র পুলিশ দখল করে নিয়েছিল, যেখানে আমাদের ক্লার্করা ও কিছু বাইরের লোক ভোট দিয়েছে।'
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠানের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। রোববার আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নীল দলের সমর্থক প্রার্থীরা নির্বাচনে আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
তারা আইনমন্ত্রী-অ্যাটর্নি জেনারেলকে পুলিশি হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
একইসাথে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে, কার্যকরী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক অবিলম্বে একটি নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জোর দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। বক্তব্য রাখেন নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নির্বাচন ঘিরে আইনজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক আগ্রহ ছিল। কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করেছি, দেশের অন্য সব নির্বাচনের মতো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক চরিত্র, তার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনেও একই ধরনের প্রহসনের নির্বাচন করা হয়েছে।
আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু অতি উৎসাহী আইনজীবী ও পুলিশের নারকীয় তাণ্ডব আইনজীবী হিসেবে সমাজের কাছে আমাদের হেয় করেছে। এটা শুধু আইনজীবী সমাজেরই নয়, পুরো জাতির জন্যই কলঙ্কজনক।
চলমান ঘটনা নিয়ে তারা প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয়েছেন উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রার্থী একাধিকবার প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া পুলিশের তাণ্ডবে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের আহত হওয়ার বিষয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়েছে।
'এরপরও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়নি। পুলিশি তাণ্ডবের কোনো দৃশ্যমান প্রতিকার হয়নি। আমাদের দুঃখ, আইনজীবীদের একটি সমিতির নির্বাচনেও পুলিশকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করতে হয়। এটা বড় লজ্জার বিষয়।'
নতুন নির্বাচন দাবি করে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা বলেন, অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে কার্যকরী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক অবিলম্বে একটি নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি। আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর ন্যাক্কারজনক পুলিশি হামলার নির্দেশদাতা আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করছি।