পরিত্যক্ত ঘোষণার চার বছরেও ভাঙ্গা হয়নি ঢাকা উত্তরের ৮ মার্কেট
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কারওয়ান বাজার ভবনের দোতলায় একটি ঘরে ৭/৮ জনের সাথে থাকেন দিনমজুর ইদ্রিস মিয়া। তাদের রুমের ছাদের বেশ কয়েকটি অংশ ইতিমধ্যে খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। এ ভবনটি ২০১৯ সালে সিটি কর্পোরেশন থেকেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করে এবং এটি ভেঙে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের সুপারিশ করা হয়।
ইদ্রিস মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এ ভবনটির দেয়াল, ছাদ নিয়মিতই খসে পড়ে। তাই বিভিন্ন স্থানে কাঠ দিয়ে রাখা হয়েছে যেন মাথার উপরে না পড়ে। এছাড়া সিঁড়ি, পিলারও ভাঙ্গা অনেক স্থানে। এ ভবনটির উপরে এমন ১০/১২টি ঘর আছে যেখানে অল্প টাকায় আমাদের মতো শ্রমিকদের থাকার সুযোগ আছে। তবে সবসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই থাকতে হয়।
এমনকি কারওয়ান বাজারের এ ভবনটির দোতলার একটি অংশে এখনও ঝুঁকি নিয়ে চলছে উত্তর সিটির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক কার্যালয়। গত সেপ্টেম্বরে এ অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষসহ আরও কয়েকটি কক্ষে ভবনের ছাদের অংশ খসে পড়ে। তখন উত্তর সিটি বলেছিল এক মাসের মধ্যেই তারা আঞ্চলিক কার্যালয় সরিয়ে ফেলবে এবং বাকি ব্যবসায়ীদের সরিয়ে ভবনটি খুব তাড়াতাড়িই ভেঙ্গে ফেলবে। কিন্তু এখনও সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে সকল কার্যক্রম।
শুধু কারওয়ান বাজারের এ ভবনটি নয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫টি এলাকার ৮টি মার্কেট ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার পরেও ভবনগুলোতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এছাড়াও উত্তর সিটির আরও ১১টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হলেও সেগুলোর কোনো রেকটিফায়ারিং কিংবা মেরামত ব্যতীতই চলছে মার্কেটের কার্যক্রম।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এসব মার্কেট পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ঢাকা উত্তর সিটির সম্পত্তি বিভাগ।
উত্তর সিটি বলছে, দ্রুতই এসব পরিত্যক্ত ভবন থেকে সকল কার্যক্রম সরিয়ে ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হবে। সামনের ঈদুল ফিতরের পরেই এ কার্যক্রমে উত্তর সিটি মাঠে নামবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সোমবার বলেন, 'আমাদের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৮টি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বলে দিয়েছি তারা যেন চলে যায়। এর মধ্যে কারওয়ান বাজারেরই চারটি মার্কেট। আমি ইতিমধ্যে বলে দিয়েছি এবং মার্কেটে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছি, এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট।'
তিনি বলেন, 'মার্কেটে যারা কর্তৃপক্ষ আছে তাদেরকে আমি ডেকেছি। আমরা তাদের বলেছি অন্য জায়গায় চলে যান, এই মার্কেটগুলোকে আমাদের সংস্কার করতে হবে। এটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কারণ মার্কেট থেকে কেউ যেতে চায় না। কিন্তু আমরা দেখেছি এই মার্কেটগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা এগুলো খালি করে ফেলব। তারা আমার কাছে এসেছে, বলেছে ঈদের সময় আমরা কী করব? তাই ঈদ পর্যন্ত তাদের সময় দিয়েছি।'
মেয়র আরও বলেন, 'কারওয়ান বাজার এখানে থাকবে না। সরিয়ে গাবতলী এবং যাত্রাবাড়ি নেওয়া হবে। আমরা এই কারওয়ান বাজার সরানোর জন্য যা যা করা দরকার ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছি।'
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দেওয়া তথ্যমতে, উত্তরের মালিকানাধীন ৪৩টি মার্কেটের মধ্যে মাত্র ১৫টি মার্কেট ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। এছাড়া ৮টি পরিত্যক্ত এবং ১১টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
পরিত্যক্ত হওয়া সত্ত্বেও ব্যবহৃত মার্কেটের ভবনগুলো হচ্ছে- মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, গুলশান-২ এর গুলশান কাঁচা মার্কেট, গুলশান-১ এর গুলশান পাকা মার্কেট, রায়ের বাজার মার্কেট, কারওয়ান বাজার কাঁচা মার্কেট (কিচেন মার্কেট), কারওয়ান বাজার ১নং ভবন মার্কেট, কারওয়ান বাজার ২নং ভবন মার্কেট এবং কারওয়ান বাজার ভবন।
এছাড়া ঢাকা উত্তরের ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো হচ্ছে- খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেট, গুলশান (উত্তর) পাকা মার্কেট, গাবতলীর প্রান্তিক সুপার মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল মিলনায়তন কাম শপিং কমপ্লেক্স মার্কেট, মোহাম্মদপুর রিং রোড টিনশেড মার্কেট, মোহাম্মদপুর রিংরোড পাকা মার্কেট, কারওয়ান বাজার মুরগী শেড, কারওয়ান বাজার অস্থায়ী মৎস্য আড়ৎ, কারওয়ানবাজার কর্মকার শেড, কারওয়ানবাজার কাঁচা মার্কেটের চতুরদিক মার্কেট এবং কলমিলতা কাঁচা মার্কেট।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশেনের মালিকানাধীন জরাজীর্ণ মার্কেট ভবনসমূহ পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণার বিষয়ে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারির সভায় 'কনডেমনেশন' ঘোষণার সুপারিশ করা হয়। সে অনুযায়ী সেই বছরের ১লা এপ্রিল বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা এর কার্যালয় পরিত্যক্ত ঘোষণার কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। তখন উত্তর সিটির মালিকানাধীন এ ৮ মার্কেট ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণার অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষিত মার্কেট ভবন সমূহের স্থানে নতুন আধুনিক বহুতল বিশিষ্ট শপিংমল/মার্কেট নির্মাণের জন্য উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগকে এবং মার্কেটের স্থায়ী বরাদ্দ গ্রহীতাদেরকে অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়।
সভায় বিলম্বের কারণে উক্ত মার্কেট সমূহে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সম্পত্তি বিভাগ দায়ী থাকবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত ৫ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, 'যেসব মার্কেটকে ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সেগুলো এখনই ছেড়ে দিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানাই।'
অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকা ঢাকার কিছু বিপণিবিতান বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে রবিবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, "আমি মনে করি, ঈদের ঠিক পরে ঢাকার কিছু বিপণিবিতান বন্ধ করে দেওয়া হবে। এক বা দুটো বিপণিবিতানকে আমরা মনে করি অনিরাপদ এবং সেখানে আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের বিষয়ে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।'