বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক ৩০৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেট ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের মালামাল ও অবকাঠামোগত প্রায় ৩০৩.০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসাবে সিগারেটের আগুন বা মশার কয়েলের সম্ভাব্যতার উল্লেখ করেছে ঢাকা সিটি করপোরেশন। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেও আগুন লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
এছাড়াও ধারণা করা হচ্ছে, আগুনের সূত্রপাত আদর্শ মার্কেটের ৩য় তলার একটি এমব্রয়ডারি টেইলার্স থেকে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেট (গুলিস্তান ইউনিট, বঙ্গ ইউনিট, মহানগরী ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট), মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স এর মোট ৩৮৪৫টি দোকানের ২৮৮.৩৫০ কোটি টাকার মালামাল এবং ১৪.৭০ কোটি টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়। পাশাপাশি এনেক্সকো টাওয়ারেরও অবকাঠামোগত ক্ষতি ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা।
তবে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এনেক্সকো টাওয়ারের প্রতিনিধি জানিয়েছেন উক্ত মার্কেটের প্রায় সব দোকানের বীমা রয়েছে বিধায় তারা এই মূহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা দাখিল করার চিন্তা করছেন না।
বঙ্গবাজারের দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নপূর্বক অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের লক্ষ্যে গত ৪ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে হস্তান্তর করে তদন্ত কমিটি।
আট সদস্যের তদন্ত কমিটিতে অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তা বা বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এতে বলা হয়েছে, আগুনে মোট ৩,৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আগে এ সংখ্যা ছিল ৪,২০০।
গত ৪ এপ্রিল অগ্নিকাণ্ডের পরপরই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, আগুনে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সংখ্যার এই অসঙ্গতি সম্পর্কে তদন্ত কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল এবং তদন্ত কমিটি জমার আগে তা সংকলন করেছিল।
মেরিনা জানান, ডিএসসিসির কাছে বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের তালিকা রয়েছে এবং তারা দোকান মালিক সমিতির নেতাদের দেওয়া তালিকার সাথে তা মিলিয়ে (ক্রসচেক) দেখেছে।
তিনি বলেন, তালিকায় অ্যানেক্সকো টাওয়ার ছাড়া বাকি সবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের ব্যবসায়ীরা রয়েছেন।
এদিকে আজ থেকে বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সড়কে চৌকি বিছিয়ে অস্থায়ী দোকান দেওয়ার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করতে পারবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
দুপুরের দিকে তার অস্থায়ী দোকানগুলো উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
ডিএসসিসির অদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক এবং তদন্তকারী দলের সদস্য দিনমনি শর্মা বলেন, তাদের তদন্তে এখনও সেভাবে কিছু পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, "আমরা এখনও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নিচ্ছি এবং আগুনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।"
প্রতিবেদনে ঢাকা দক্ষিণের অধীনে কাঠের তৈরি যে কোনো মার্কেটকে দ্রুত কংক্রিটের বা পাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়াও পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা এবং ভূগর্ভস্থ জলাধার ও পাইপের সংযোগের মাধ্যমে মার্কেটের অন্তত চারটি স্থানে ওয়াটার হাইড্রেন্ট স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।