উৎসব-আনন্দে চলছে পহেলা বৈশাখ উদযাপন
উৎসব-আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন, পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে।
জীর্ণতা ঘুচিয়ে নতুনের আহ্বানে নববর্ষকে স্বাগত জানাচ্ছেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। বছরের প্রথম দিন নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-আত্মজাগরণের সুরবাণী দিয়ে সাজানো হয় ছায়ানটের এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূলে শুরু হয় ছায়ানটের বর্ষবরণ-১৪৩০ উদযাপন অনুষ্ঠান। বৈশাখের প্রথম সকালে নতুন বছরকে এক কণ্ঠে বরণ করে নেয় ছায়ানটের শতাধিক শিল্পী।
সকাল সোয়া ৬টায় রাগ যন্ত্রবাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান শেষ হয় সকাল সাড়ে ৮ টায়।
এদিকে চারুকলার গেট থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় সকাল ৯টায়। শাহবাগ মোড় ঘুড়ে আবার চারুকলার গেটে এসে শেষ হয় ৯টা ৪০ মিনিটে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত শোভাযাত্রাটিকে ২০১৬ সালে ইউনেস্কো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
নিরাপত্তার জন্য এবারের শোভাযাত্রার দুইপাশে সোয়াট এবং সামনে-পেছনে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা ছিলেন।
'বরিষ ধরার মাঝে শান্তির বারি' প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রধান আকর্ষণ দুই মোটিফ হলো মায়ের কোলে শিশু এবং নীলগাই। মায়ের কোলে সন্তান যেমন নিরাপদ, প্রতীকীভাবে বৈশ্বিক শান্তির বার্তা রয়েছে সেখানে। এছাড়া বিপন্ন হারিয়ে যাওয়া প্রাণীদের প্রতীকী হিসেবে রাখা হয়েছে নীলগাই। এ ছাড়াও আরও চারটি মোটিফ শোভাযাত্রায় প্রদর্শিত হয়। সেগুলো হলো বাঘ, ময়ূর, ভেড়া ও হরিণ। চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার পর ঢোলের তালে তালে নাচতে শুরু করেন অংশগ্রহণকারীরা। অনেকেই রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা উপভোগ করেন।
মঙ্গল শোভাযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকেই টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ ও এর আশেপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে।
তবে গত বছরের মতো এবারও তুলনামূলক লোক সমাগম ছিলো কম।
নরওয়ের নাগরিক ক্যারেন সপরিবারে মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে এসেছেন, এক বছর হয় বাংলাদেশে আছেন তারা। তার স্বামী বাংলাদেশে চাকরি করেন।
ক্যারেন বাংলায় কিছুটা বলতে পারেন। তিনি বলেন, "এই অনুষ্ঠানে এসে ভালো লাগছে। অনেক কালারফুল। শুভ নববর্ষ।"
রামপুরার সুনীল কুমার বলেন, "গতবারের চেয়ে তুলনামূলক কম লোক হয়েছে। সেটা রোজা ও গরমের কারণে হতে পারে।"
গাজীপুর থেকে এসেছেন মুক্তিযোদ্ধা রুহেল আহমেদ বাবু। তিনি বলেন, "আদালতে একটি রিট হয়েছে। এর নিন্দা জানাই। আমি বলবো এ আয়োজনের সঙ্গে ধর্মকে মেলালে হবে না। আমরা চাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি।"
পরিবারের সাথে মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে আসা রাবেয়া রাবু বলেন, "আগে যেমন ভিড়ের জন্য হাঁটাই যেতো না এবার সেটা হয় নি। আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিলাম। এবার কাছ থেকে শোভাযাত্রার মোটিভ দেখতে পেরেছি।"
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেশবাসীকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাকে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত, সমৃদ্ধ 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণে সকলকে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা গতকাল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, "নববর্ষের প্রাক্কালে আমাদের প্রার্থনা এই যে, সকল অন্ধকার ও প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে আমরা যেন একটি সুখী সমৃদ্ধশালী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারি।"