৫.২৫ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে গণপরিবহন প্ল্যাটফর্ম যাত্রী
বাংলাদেশের গণপরিবহন নিয়ে কাজ করা স্টার্টআপ 'যাত্রী' সম্প্রতি এক বিনিয়োগ পাওয়ার মাধ্যমে ৫.২৫ মিলিয়ন ডলার তহবিল গঠন করেছে।
এই বিনিয়োগের নেতৃত্বে রয়েছে সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড এসবিকে টেক ভেঞ্চারস। এছাড়াও এএলএসএ, জেন্টিং ভেঞ্চারস, ডিভিসি এবং দোহা টেক অ্যাঞ্জেলসের মতো বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরাও এতে যোগ দিয়েছে বলে গত শনিবার (১৫ এপ্রিল) ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। এগুলো ছাড়াও রিফ্লেকট ভেঞ্চারস, ব্রেইন-ঠু-ফ্রি ভেঞ্চারস, টোকুমসেফ ক্যাপিটাল এবং সাবর ক্যাপিটালও পরবর্তীতে এই তালিকায় যোগ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রধান বিনিয়োগকারী এসবিকে টেকের উদ্যোগেই অন্য বিনিয়োগকারীরা এর সাথে যুক্ত হয়েছে, এবং এই নতুন ফান্ডের সহায়তায় যাত্রী তাদের সেবা আরও উন্নয়নে জোর দেবে এবং নতুন নতুন শহরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করবে।
২০১৯ সাল থেকে যাত্রী বাংলাদেশের গণপরিবহনের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করছে, যাদের লক্ষ্য পুরো প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়ন এবং ডিজিটালাইজ করা। এর ফলে যাত্রী থেকে শুরু করে চালক এবং মালিক সবাই সুবিধা পাবে।
এই প্রযুক্তি সেবায় চালক এবং মালিকরা একটি কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে ঐ নেটওয়ার্কের সমস্ত যানের অবস্থান সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য দেখতে পাবেন। প্রত্যেকটি তথ্যকে ডিজিটাইজ করার ফলে সহজেই কোথায় বেশি যাত্রী রয়েছে, কোথায় বেশি চাপ রয়েহে তা চিহ্নিত করে সেখানে আরও বেশি যানবাহন নিয়োগ করতে পারবেন মালিকরা। এছাড়া যাত্রীরাও নির্ধারিত ভাড়া, স্বচ্ছতা এবং বিভিন্ন ধরনের যাতায়াত ব্যবস্থার মধ্যে থেকে সুবিধামতো সেবা বাছাই করার সুবিধা পাবেন।
কোম্পানিটি এখন গণপরিবহনে ডিজিটাল পেমেন্ট সুবিধা যুক্ত করার জন্য কাজ করছে। এটি কার্যকর হলে নগদ টাকার ওপর নির্ভর করা এই পুরো ব্যবস্থাটিই ক্যাশলেস অবস্থার দিকে ধাবিত হবে।
এসবিকে টেকনোলজির ম্যানেজিং পার্টনার এবং প্রধান বিনিয়োগকারী সোনিয়া বশির কবির জানান, "আমরা যাত্রীর মতো স্টার্টআপে বিনিয়োগ করতে বদ্ধপরিকর, যারা সমাজের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে।"
তিনি জানান, "গণপরিবহন খাতের সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার জড়িত। এই খাতটি তেমন কর্মদক্ষ নয়, প্রচুর অস্বচ্ছতা রয়েছে এবং এর সাথে ব্যাংকের সরাসরি সম্পর্ক নেই। ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে এই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যেটি বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যাত্রীর এই উদ্যোগ দেখিয়েছে যে, প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশালাকারের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।"
কাগজভিত্তিক হাতেলেখা রিপোর্টিংয়ের পরিবর্তে যাত্রীর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বাসপ্রতি দৈনিক বিক্রি ১৫-২৫% বাড়িয়ে দিয়েছে, যেটি এর আগে কর্মচারীদের চুরি বা ভুল হিসাবের কারণে মালিকপক্ষ পেত না। ইতিমধ্যেই কোম্পানিটির ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা রোড ট্রান্সপোর্ট ঔনার্স অ্যাসোসিয়েশন যাত্রীকে তাদের ই-টিকেটিং পার্টনার হিসেবে ঘোষণা করেছে, যার ফলে ঢাকা শহরের ৫,৬৫০টি বাস এই সেবার আওতাধীন হয়েছে। এরপরেই সারাদেশের বাসমালিকরা যাত্রীর সেবা নেওয়ার দিকে আগ্রহী হয়েছেন।
যাত্রীর সিইও আজিজ আরমান জানান, "বাসমালিক ও অপারেটরদের এই বাড়তে থাকা চাহিদা প্রমাণ করে বাংলাদেশের গণপরিবহন খাতের জন্য এই ডিজিটাল রূপান্তর কতটুকু প্রয়োজন ছিল। এই নতুন তহবিল আমাদের কাজকে আরও দ্রুতগতিতে করতে সাহায্য করবে। আমরা এখন পুরো ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন করতে এর নতুন সংস্করণ বের করতে কাজ করছি।"
"আমাদেরকে সহযোগিতা ও আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখার জন্য বাস মালিক, অপারেটর এবং যাত্রীদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।"
সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিয়া উদ্দিন এবং খন্দকার তাসওয়ার জাহিনকে সাথে নিয়ে 'যাত্রী' স্টার্টআপ শুরু করেছিলেন আজিজ আরমান। বাংলাদেশের প্রযুক্তি, যাতায়াত এবং লজিস্টিকসে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করে যাচ্ছেন এই তিনজন।
সূত্র: টিবিএস রিপোর্ট