প্রচণ্ড গরমে জনজীবনে হাসঁফাঁস
সারাদেশে বয়ে যাওয়া তীব্র দাবদাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে গরমে আরও কয়েকদিন কষ্ট পেতে হবে মানুষকে।
রেকর্ড তাপমাত্রার কারণে সারাদেশ জনজীবন নাকাল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষেরা।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকালে নিউ ইস্কাটন এলাকায় গরম থেকে বাচঁতে রিকশা না চালিয়ে রাস্তার পাশে রিকশায় শুয়ে থাকতে দেখা যায় কামাল হোসেনকে।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এ গরমে রিকশা টানলে গলা শুকিয়ে যায়। এত গরম যে শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া করে রোদের তাপে।'
আরেক রিকশাচালক জসিম মিয়া বলেন, 'রোজা থেকে এত গরমে রিকশা টানা খুবই কষ্টের… দুপুরে সূর্যের প্রচণ্ড তাপের কারণে রিকশা চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।'
তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা রাজধানীবাসির। বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। কষ্ট হচ্ছে ঘুমাতেও।
আগারগাঁও এলাকার আব্দুল কাদির জানান, গরম থেকে বাঁচতে দুবার গোসল করার পরেও রাতে ঘুমাতে পারেননি তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলমান এ তাপদাহ দেশজুড়ে আগামীকালও চলার সম্ভাবনা রয়েছে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক এবং আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, '২১শে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে তাপদাহ বজায় থাকবে এবং এরপর ২৩ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।'
২১ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা শহরে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রতিদিনই ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা নির্দেশ করেছে সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। ১৮ থেকে ২০শে এপ্রিল রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা এবং যশোর জেলায় তাপমাত্রা ৪১ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে বলেও জানান পলাশ।
২৩ এপ্রিলের পর দেশের কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বেশি না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আবহাওয়ার পূর্ভাভাস মডেলের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ২৩ এপ্রিল দেশে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পলাশ জানান, পশ্চিমা লঘুচাপ এখন পাকিস্তান ও ইরানের সীমান্তে অবস্থান করছে। সপ্তাহের শেষের দিকে এটি ভারতে প্রবেশ করা শুরু করবে এবং আগামী ২১ তারিখের দিকে ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ দিয়ে অতিক্রম করবে। এর ফলে বাংলাদেশের সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে মেঘ সৃষ্টি হবে। ২৩শে এপ্রিলের পর থেকে বাংলাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি ও কালবৈশাখি ঝড় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ গবেষক নিজের ফেইসবুক পেইজে আরও লিখেন, 'এপ্রিলের ২৩ তারিখ থেকে মে মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় ১০ দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলো। ফলে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের হাওর এলাকায় পাহাড়ি ঢল নামার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।'
তবে আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, 'সাধারণত এপ্রিল মাসে দেশের তাপমাত্রা বেশিই থাকে। তবে তাপমাত্রার পরিমাণটা এ বছর একটু বেশি। অন্য বার তাপদাহের স্থায়িত্ব সর্বোচ্চ পাঁচদিন থাকলেও এবার ১১ দিনেরও বেশি সময় ধরে তাপদাহ চলছে।'
'ঢাকায় আপাতত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চুয়াডাঙ্গাতে ২৪শে এপ্রিলের পর বৃষ্টি হতে পারে। এখন বৃষ্টিপাত হলেই বজ্রপাত ও কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে,' তিনি বলেন।