ঈশ্বরদীতে আজও তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি, অসহনীয় তাপদাহের শিকার মানুষ-পশুপাখি
একদিকে তীব্র তাপদাহ, আরেকদিকে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত ঈশ্বরদীর জনজীবন। গত সোমবার (১৭ এপ্রিল) ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজও তা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি। দুপুরে ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঈশ্বরদীতে গ্রীষ্মকালে সচরাচর তাপমাত্রা বেশি থাকলেও এবার তা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। তারমধ্যে দিনে অন্তত তিন ঘণ্টা সেখানে কোনো বিদ্যুৎ থাকছে না বলে জানিয়েছেন সাধারণ বাসিন্দারা।
ঈশ্বরদীর ফতে মোহাম্মদপুর গ্রামে বসবাসরত বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল মান্নান বাবু জানান, বাইরে বের হলে তাপদাহ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে ক্যাপ পানিতে ভিজিয়ে তা মাথায় দিয়ে রাখেন তিনি।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "দিনে দুইবার করে গোসল করতে হচ্ছে। বারবার হাতমুখ ধুতে হচ্ছে। আর পানি খাওয়ার পরিমাণ তো বেড়েছেই। ঘাম হচ্ছে প্রচুর।"
একই উপায়ে গরম থেকে স্বস্তি পেতে বারবার গায়ে ঠান্ডা পানি দেওয়ার কথা জানান শৈলপাড়ার বাসিন্দা আবু আরাফাত মোহাম্মদ আরিফ (৩৮)।
পেশায় ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, "অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচতে বারবার হাতমুখ ধুতে হচ্ছে। কাজের তাগিদে তো বাইরে বের হতেই হয়।"
তীব্র গরমে মোটরসাইকেল চালানোও প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।
আরিফ আরো বলেন, "মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও এই গরমে কষ্ট পাচ্ছে।"
অতিরিক্ত তাপদাহে নিজের মুরগির খামার পরিচালনায়ও হিমশিম খাচ্ছেন আরিফ। তিনি বলেন, "খামারের ভেতর গরম কমানোর জন্য খোয়াড়ের চালা বারবার ভিজিয়ে দিতে হচ্ছে। দিনে ১০/১২টা ফ্যান চালু রাখা হচ্ছে।"
দিনে তিন চারবার করে বিদ্যুৎ থাকছে না বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে পাবনার নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী লিমিটেড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাজেদুল হক মিঠুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পাবনায় আমাদের নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী লিমিটেড ১ ও ২ ইউনিট মিলে এখন বিদ্যুতের স্বাভাবিক চাহিদা ৪৫ থেকে ৫০ মেগাওয়াট।"
তিনি আরো জানান, "আজকে দুপুর ২ টায় চাহিদা ও সরবরাহ সমান। অর্থাৎ এখন কোনো লোডশেড নেই। কিন্তু গতকাল ছিল।"
"গতকাল আমাদের ইউনিট ১ এ চাহিদা ছিল ২৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ ছিল ২০ মেগাওয়াট। এই কারণে লোডশেডিং হয়েছে," বলেন তিনি।
এদিকে সাঁড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুদ রানাও লোডশেডিং এর কারণে ভোগান্তির কথা জানান।
তিনি বলেন, "দিনে বা রাতে অনবরত বিদ্যুৎ থাকছে না। আর একবার বিদ্যুত গেলে দেড় ঘণ্টা বা এক ঘণ্টার আগে তা আসছে না। গরমে আমার পরিবারের লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।"
গরমে ঘরে থাকারও কোনো উপায় নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বাজারের জন্য হলেও তো বাইরে বের হতেই হয়।"
প্রখর রোদে গাছের পাতাও শুকিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মাসুদ রানা আরো বলেন, "আমি সুপারির চাষ করি। সুপারি বাগানে জমে থাকা পানিতে স্বস্তি নিতে আসছে পাখিরাও।"
পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, "দুদিন আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় সবাইকে তাপপ্রবাহ নিয়ে সচেতন করা হয়েছে।"
সভায় ইউএনও, ফায়ার সার্ভিস, চেম্বার অব কমার্সসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
রাসেল হোসেন আরো বলেন, "ফায়ার সার্ভিসকে আগুনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পানির বিকল্প ব্যবস্থা নির্ধারণেও তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"
তাছাড়া, মানুষ যাতে বিনা প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে বাইরে বের না হয়, সে বিষয়েও তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।