সেমাই-চিনিসহ ঈদের মিষ্টান্ন সামগ্রীর দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত
ঈদে আপ্যায়নের প্রধান উপকরণ থাকে মিষ্টান্ন। সেমাই-ফিন্নি বা পায়েশে ভিন্ন সাধ যুক্ত করে নারকেল। দুই বছরের ব্যবধানে নারকেলের দাম বেড়েছে অন্তত তিন গুণ। ২০২১ সালেও একটি নারকেল খুচরা বিক্রি হতো ৪০-৪৫ টাকায়। বর্তমানে তা গিয়ে ঠেকেছে ১২০-১৪০ টাকায়। শুধু নারকেলই নয়, ঈদে প্রচলিত প্রত্যেকটি সামগ্রীর দাম এবার বাড়তি। এজন্য নিম্ন ও মধ্যবিত্তদেরকে বাজার ক্রয়ের তালিকা কাটছাঁট করতে হয়েছে।
দেশের ভোগ্যপণের সবচেয়ে বড় বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই বাজারে সেমাই, চিনি, নুডলসসহ ঈদ সামগ্রীর শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা চলছে। ময়দা, ভোজ্যতেলসহ কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির ফলে এবার প্রভাব পড়েছে ঈদ পণ্য সেমাই ও নুডলসেও। গত বছরের তুলনায় খোলা-প্যাকেটজাত সব ধরনের সেমাই ও নুডলসের দাম বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের ভালো মানের বাংলা সেমাইয়ের ৩৫ কেজির টুকরি বিক্রি হচ্ছে ২,৪০০ টাকায়। অথচ তা ২০২২ সালে ছিল ১,৫০০-১,৭০০ টাকা এবং ২০২১ সালে ছিল ১,৩০০-১,৫০০ টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতিকেজি বাংলা সেমাইয়ের দাম বেড়েছে অন্তত ২৬ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজির দাম বেড়েছে অন্তত ৪০ টাকা হারে। বাজারে থাকা বেশিরভাগ কোম্পানির ২০০ গ্রামের প্যাকেটজাত সেমাইয়ের দাম দুই বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। এ বছর প্রতি প্যাকেট সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা।
একই অবস্থা লাচ্ছা সেমাইয়েও। এর অন্যতম কাঁচামাল ভোজ্যতেল ও ময়দার দাম বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে পাইকারি ভালো মানের লাচ্ছা সেমাইয়ের ১০ কেজির টুকরি ১,৪০০-১,৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০২২ সালে যা ছিল ১,৩০০ টাকা এবং ২০২১ সালে ছিল ১,১০০-১,২০০ টাকা। পণ্যটি খুচরা বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা দরে। দুই বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে অন্তত ৫৫ শতাংশ।
বিভিন্ন কোম্পানির ২০০ গ্রাম প্যাকেটের লাচ্ছা সেমাইয়ের দামও বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া গত দুই বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনি ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ১১৫ টাকায় পৌঁছেছে।
খাতুনগঞ্জের নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্স-এর স্বত্বাধিকারী অমল সাহা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সেমাই তৈরির মূল উপকরণ ভোজ্যতেল ও ময়দা এবং পরিবহন ব্যয়সহ আনুষাঙ্গিক সকল ব্যয় বেড়ে গিয়েছে বলে ভোক্তা পর্যায়ে সেমাইয়ের দাম বেড়েছে।'
সেমাই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বনফুল অ্যান্ড কোং-এর ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট) মাহমুদুর রহমান চৌধুরীও সেমাইয়ের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য তেল ও ময়দার দামবৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন।
এদিকে নুডলসের দামও গত দুই বছরের তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ১২ প্যাকেটের ফ্যামিলি প্যাকের নুডলস ১৯০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০ টাকায় পৌঁছেছে। একইভাবে বেড়েছে আট ও চার প্যাকেটের নুডলস প্যাকের দাম।
চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউরি বাজারের মেসার্স ইলিয়াস স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইলিয়াস সওদাগর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আগে যিনি পাঁচ কেজি চিনি কিনতেন, এ বছর তিনি কিনেছেন দুই কেজি। একই অবস্থা অন্যান্য সব পণ্যে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বেড়েছে। তাই মানুষ সমন্বয় করতে ঈদ সামগ্রী কম কিনছেন।'