ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ভারতীয় পণ্য পরিবহনে ইলেকট্রনিক সিল বাধ্যতামূলক করছে এনবিআর
ট্রানজিট চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহনে ইলেকট্রনিক সিল বা ইলেকট্রনিক লক বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ বিষয়ে বিধিমালা জারি করতে কাজ করছে কাস্টম মডার্নাইজেশন ডেস্ক।
ইলেকট্রনিক সিল বাধ্যতামূলক করা হলে বন্দর থেকে কন্টেইনার বা কাভার্ড ভ্যানে পণ্য পরিবহনে পণ্য চুরির ঘটনা কমে আসবে। বাড়বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিশেষ করে সড়ক পথে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ভারতীয় পণ্য পরিবহনে স্টকের নামে কাস্টম কর্মকর্তাদের পাহারা দেওয়ার বিড়ম্বনা কমে আসবে।
ইলেকট্রনিক সিল হচ্ছে অবৈধভাবে ঘষামাজা বা পরিবর্তন প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক প্রযুক্তির রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন ডিভাইসেস (আরএফআইডি)। এই সিল থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পণ্য চালানটি কোথায় আছে, তা সহজেই শনাক্ত করা যায়। এটি চাবি দিয়ে খুলতে ও বন্ধ করতে হবে।
বন্দর থেকে ডিপোতে আমদানি–রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তার জন্য ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনবার ইলেকট্রনিক সিলের বিধিমালা জারি করে রাজস্ব বোর্ড। কিন্তু ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে ইলেকট্রনিক সিল ব্যবহৃত হয়। এতে পণ্যের নিরাপত্তার জন্য বাড়তি পাহারার দরকার হয় না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইলেকট্রনিক সিল বাধ্যতামূলক করতে শীঘ্রই বিধিমালা জারি করবে বোর্ড। এ বিষয়ে কাজ কারছে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট শাখা। চাহিদা অনুযায়ী এই বিধান সংশোধন করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস অডিট, মডার্নাইজেশন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড) ড. আবদুল মান্নান শিকদার টিবিএসকে বলেন, "ইলেকট্রনিক সিল বাধ্যতামূলক আলটিমেটলি (শেষ পর্যন্ত) করতে হবে।" তবে কবে নাগাদ বিধিমালা জারি হবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেকেন্ড সেক্রেটারি (কাস্টমস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্ট) ওমর মোবিন টিবিএসকে বলেন, "এনবিআরের কাস্টম মডার্নাইজেশন শাখা ইলেকট্রিক সিল বিধিমালা জারির বিষয়ে কাজ শুরু করছে। কাজ শেষ হলে কাস্টমস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্ট শাখা থেকে বিধিমালা জারি হবে।"
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পূর্বের বিধিমালায় ৪৮ ঘণ্টা সিল ব্যবহারের জন্য কনটেইনার প্রতি ৬০০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫০ টাকা করে আদায় করার কথা বলা হয়। সিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানেরই এ মাশুল আদায় করার কথা।
এনবিআর এর এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইলেকট্রনিক লক ও সিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না করা পর্যন্ত এই ফি আদায়যোগ্য হবে না। তবে বিধিমালা কার্যকর না থাকায় ট্রানজিট চুক্তির আওতায় আসা পণ্য চালানগুলোতে ইলেকট্রিক সিল ব্যবহার করা যায়নি।
ফলে ট্রানজিট পণ্য চালানে ইলেকট্রনিক সিল বা লক ব্যবহার না করে কাস্টম কর্মকর্তারা পাহারা দিয়ে পণ্য পাঠান ভারতে। ইলেকট্রনিক সিল ব্যবহার না হওয়ায় এই সংক্রান্ত মাশুল আদায় করতে পারেনি কাস্টম।
ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বাংলাদেশের দুটি সমুদ্রবন্দর- চট্টগ্রাম এবং মংলা ব্যবহারের বিষয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে একটি চুক্তি করে ঢাকা ও দিল্লি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের এক বছর পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে পণ্য পরিবহনের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির পর ২০২০ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে প্রথম চালান আনা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য পরিবহনে কিংবা অফডকমুখী রপ্তানি পণ্য চালানে প্রায়শই চুরির ঘটনা ঘটে। অর্ডার অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ না পাওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।
পণ্য পরিবহনে ইলেকট্রনিক সিল থাকলে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত চুরির ঘটনা রোধ করা যেত বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা আরো জানিয়েছেন, এনবিআরের আগের বিধিমালা অনুযায়ী ইলেকট্রিক সিলের মাসুল অনেক বেশি। বন্দরে জট, সড়ক পথে যানজট সহ নানা কারণে বন্দর বা আইসিডি থেকে গন্তব্যে পণ্য পাঠাতে তাদের খরচ বেড়ে যাবে। তাই ইলেকট্রনিক সিলের মাশুল যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ টিবিএসকে বলেন, কন্টেইনার থেকে পণ্য চুরির ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।
"জাহাজের মেইন লাইন অপারেটরদের (এমএলও) জবাবদিহির মুখে পড়তে হয়। তাই ইলেকট্রিক সিল বাধ্যতামূলক করা যৌক্তিক। ব্যবসার খরচ যাতে বেড়ে না যায় মাশুল নির্ধারণে সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে," বলেন তিনি।