দেশের দরিদ্রতম বিভাগ রংপুর, পরেই রয়েছে ময়মনসিংহ: বিবিএস
দেশে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস রংপুর বিভাগে। অর্থাৎ, এখনও দেশের দরিদ্রতম বিভাগ উত্তরাঞ্চলের রংপুর। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও দুর্বল শিল্পায়ন এই অঞ্চলের দারিদ্র্যের হারে খুব বেশি পরিবর্তন আনতে পারেনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুসারে, দেশের ৮ বিভাগের মধ্যে দারিদ্র-প্রবণ উত্তর অঞ্চলের রংপুর বিভাগের মানুষেরা সম্পদের দিক দিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে। এই বিভাগের ৪৪ শতাংশ পরিবারই দরিদ্র। এরপরেই রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। সম্পদ এবং আর্থ-সামাজিক সূচক বিবেচনায় ময়মনসিংহে ৩৯.৫৭ শতাংশ দরিদ্র পরিবার রয়েছে।
২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপেও দেখা যায়, দেশে সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষ (৪৭ শতাংশ) রয়েছে রংপুর বিভাগে। এরপরেই ছিল ময়মনসিংহ বিভাগ। সে সময় এই বিভাগে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল প্রায় ৩৩ শতাংশ।
গত ১৭ এপ্রিল পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত 'বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২১' শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ধনী লোকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০.৯৭ শতাংশ ধনী পরিবার বসবাস করে এই বিভাগে।
এদিকে, জাতীয় পর্যায়ে খানা হিসাবে দেশে মোট দরিদ্র পরিবার ২৪.১৮ শতাংশ, যেখানে ধনী পরিবারের সংখ্যা ১৩.৬২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঐতিহাসিকভাবে দেশের দরিদ্রতম অঞ্চলগুলো এখনও দরিদ্রই রয়ে গেছে। এসব অঞ্চলের দারিদ্র্যতা কমাতে বিবিএস কর্মকর্তারা সরকারকে শিল্পায়নের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এসব পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষদের আয় বাড়ানো যায়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন দ্য বিজিনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত দশকে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের নামে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা এসব দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকার মানুষদের দারিদ্র্য কমাতে পারেনি।
"যদিও পরিবহন অবকাঠামো বাণিজ্য ও মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা এনে দিয়েছে, কিন্তু আয় বাড়াতে এবং দারিদ্র্য কমাতে হলে ব্যণিজ্যিক পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। দারিদ্র্যতা কমাতে শিল্পায়নের পরিবেশ তৈরির কোনো বিকল্প নেই," যোগ করেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, গড় হিসেবে গত দশকে দেশের দারিদ্র্য কমলেও অঞ্চলভিত্তিক তথ্যগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য কতটা বেড়েছে।
তিনি বলেন, ময়মনসিংহ যখন ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন এ অঞ্চলের দারিদ্র্য আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। আলাদা বিভাগ হওয়ার ফলে এখন দেখা যাচ্ছে, দেশের দ্বিতীয় দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল ময়মনসিংহ।
এদিকে, স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, এই জরিপের ওয়েলথ কুইন্টাইল একটি দেশের রিলেটিভ ওয়েলথ বা আপেক্ষিক সম্পদ এবং ইক্যুইটি বুঝতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে অ্যাবসোলিউট ওয়েলথের ধারণা পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্পদের র্যাঙ্কিংয়ে পরিবারগুলোকে ভাগ করার জন্যই সূচকটি চালু করেছে বিবিএস।
স্যাম্পল ভাইটার স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদন-২০২১ এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো 'ওয়েলথ কুইন্টাইল ইন্ডেক্স' বা সম্পদ সূচক চালু করেছে বিবিএস। এর মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নির্ণয় করা সহজ হবে বলে জানিয়েছেন বিবিএস কর্মকর্তারা।
সূচকটি গৃহস্থালীর নির্মাণ সামগ্রী, পানি, স্যানিটেশনসহ টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরের মতো বিভিন্ন জিনিসের মালিকানা নথিভুক্তির মাধ্যমে স্কোর তৈরি করে। আর এই স্কোরের ভিত্তিতেই সম্পদ সূচকে পরিবারগুলোর র্যাঙ্কিং নির্ধারিত হয়।
প্রতিবেদনে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ২০.৯৭ শতাংশ পরিবার ধনীর তালিকায় এবং সব বিভাগে অন্তত ১২.৩০ শতাংশ পরিবার দরিদ্রের তালিকায় রয়েছে।
প্রতিবেদনে দেশের গ্রামাঞ্চল, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সম্পদের সূচক নির্দেশ করা হয়েছে।
গ্রামাঞ্চলে মাত্র ৭.১৭ শতাংশ পরিবার ধনীর তালিকায় এবং ২৯.২৯ শতাংশ পরিবার দরিদ্রের তালিকায় রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের মাত্র ৩ শতাংশ পরিবার দরিদ্র এবং ৪৭.৮৬ শতাংশ পরিবার ধনীর তালকায় রয়েছে। শহর এলাকায় ধনী পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং দরিদ্রের হার সবচেয়ে কম বলে উঠে এসেছে।
সারাদেশে দুই হাজারেরও বেশি এলাকা থেকে তিন লাখেরও বেশি পরিবারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই জরিপ চালানো হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে জরিপের তথ্য সংগ্রহ শেষ হয় বলে জানান কর্মকর্তারা।