চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন কাল: নির্ভার আওয়ামী লীগ, শঙ্কা অন্য প্রার্থীদের
চট্টগ্রাম-৮ আসনে (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপ-নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না থাকায় জয় প্রায় নিশ্চিত জেনেই নির্ভার রয়েছে আওয়ামী লীগ।
অপরদিকে ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামিক ফ্রন্ট প্রার্থীরা।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা নগরী ও বোয়ালখালী উপজেলার ১৯০টি কেন্দ্রের ১৪১৪টি ভোটকক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই আসনের নির্বাচনে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ (নৌকা), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের অধ্যক্ষ আল্লামা এস এম ফরিদ উদ্দিন (চেয়ার), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মোহাম্মদ আবদুস সামাদ (মোমবাতি), এনপিপির কামাল পাশা (আম), স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মো. রমজান আলী (একতারা)।
গতকাল শেষ দিনের প্রচারণায় ৫ প্রার্থীসহ তাদের সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক শোডাউন চালিয়েছে।
তবে ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী আবদুস সামাদ (প্রতীক মোমবাতি) বলেন, "আমরা নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় আছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলীয় নেতারা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সাধারণ জনগণ যাতে ভোটকেন্দ্রে না যায়।"
তিনি অভিযোগ করেন, "বোয়ালখালী পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকায় আমার কর্মী-সমর্থক ও অভিভাবকদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। এজেন্ট থাকার জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ভয়-ভীতি দেখানোর পর এখন অনেকেই শঙ্কায় পড়েছেন। অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।"
ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থী এসএম ফরিদ উদ্দিন (চেয়ার) বলেন, "উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম মেশিনসহ অতীতের অভিজ্ঞতায় ভোট নিয়ে হতাশায় রয়েছেন জনগণ। আমরা তা দূর করতে পারিনি।"
তবে দুই প্রার্থীর অভিযোগ নাকোচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ বলেন, "বোয়ালখালীতে মানুষ ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। মুখে অভিযোগ না করে প্রার্থীরা লিখিত অভিযোগ করুক। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারা ব্যবস্থা নেবে।"
গত উপনির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, "প্রহসনের নির্বাচনে জনগণের কোনো আস্থা-বিশ্বাস নেই। বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাচন দেখলেই তা পরিলক্ষিত হয়। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। তারপরও ইভিএমের ব্যালট প্যানেল বাইরে নিয়ে গেছে সরকার দলীয় প্রার্থীর লোকজন।"
সবশেষ সোমবার দুপুরে বোয়ালখালীতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৬ জন আহত হন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থনে আয়োজিত নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় এ ঘটনা ঘটে।
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মোতাহের হোসেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আগামীকালের ভোটগ্রহণের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) এবং ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৫০০ ইভিএম।
নির্বাচনের প্রস্ততির কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, "চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সামগ্রী পৌঁছে যাবে।"
"প্রতি ভোট কেন্দ্রে এক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, একজন করে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও দুইজন করে পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চার হাজার ৪৩২ জন কর্মকর্তা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। এরসঙ্গে আরও ৫০০ অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সব মিলে প্রায় চার হাজার ৬৫০ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।"
চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের জন্য মোট ২৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৩জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
"এছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে পুলিশ-আনসার। থাকবে র্যাব। স্ট্রাইকিং ফোর্স বিশেষ করে বিজিবি মোবাইল টিম দায়িত্বপালন করবে। প্রতিটি মোবাইল টিমে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বপালন করবেন," বলেন জাহাঙ্গীর হোসাইন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭নং ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী পৌরসভা ও উপজেলার কধুরখীল, পশ্চিম ও পূর্ব গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, আমুচিয়া ও আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন।
এর আগে মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতা মইন উদ্দিন খান বাদল ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ মারা গেলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।।