ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের ফলনে ৮০% পর্যন্ত ক্ষতি
চলতি বোরো মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে কিছু জমিতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ধানের ফলন কমে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্র (বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট- ব্রি)। ফলে ব্লাস্টে আক্রান্ত ব্রি-২৮ ধানের জাত দ্রুত মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী ড. মো আব্দুর রাজ্জাক।
রোববার (৩০ এপ্রিল) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী বলেন, "ব্লাস্টে আক্রান্ত ব্রি-২৮ জাতের ধান শীঘ্রই ক্ষেত থেকে তুলে নেওয়া হবে। চাষীদের এ জাতের ধান আবাদের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছি।"
"ব্রি-২৮ জাতের চাল চিকন, উৎপাদনও ভালো। কিন্তু সব জাতই দীর্ঘদিন চাষ করলে গুণাগুন কমে যায়, বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকডের আক্রমণে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ব্রি-২৮ এত ভালো ধান, কিন্তু এটা ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে," যোগ করেন মন্ত্রী
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সারাদেশে ১৪১ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনা-২৫ ধানের প্রচুর উৎপাদন হয়েছে। বিনা-২৫ এখন পর্যন্ত দেশের সেরা জাত। এবার ধান উৎপাদনে এই জাত বিপ্লব ঘটাবে। অধিকাংশ জেলায় এর বীজ দেওয়া হয়েছে।
ব্রি-এর মহাপরিচালক ড. মো শাহজাহান কবির টিবিএসকে বলেন, "কোনো কোনো জায়গায় ফলনের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতির নমুনা পেয়েছি আমরা। সারাদেশেই এই বাস্টের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে, যেখানে ব্রি-২৮ জাতে একটু বেশি। তার মধ্যে হাওরে এটা আগাম লাগানো হয় বলে সেখানে ক্ষতি বেশি হয়েছে। তবে এর কারণে সারাদেশের মোট উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়বে না।"
তিনি বলেন, "এটি হলো ভ্যারাইটি রিপ্লেসমেন্ট (জাত প্রতিস্থাপন)। সব দেশেই একটি পুরনো জাতকে আরও আধুনিক করে বা বিকল্প জাত তৈরি করে আগের জাতটি রিপ্লেস বা প্রতিস্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রেও তাই করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ব্লাস্ট প্রতিরোধী কোনো ধানের জাত নেই।"
এদিকে কৃষিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, হাওরে এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এছাড়া, এ বছর বোরোতে রেকর্ড ২ কোটি ২০ লাখ টনের মতো চাল উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, "চলমান ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৪৯.৭৬ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আর আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ১৫ লাখ মেট্রিকটন চাল। মাঠে ধানের অবস্থা ভালো, হাওরের ধানও ভালোভাবে কাটা গেছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০ লাখ টন বেশি চাল উৎপাদন হতে পারে।"
ধানের দাম প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, "কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। ধান কাটার পরই ক্ষেত থেকে ৯০০ থেকে ১,১০০-১,২০০ টাকা মণ দরে কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে পারছেন।"