আমের বাম্পার ফলন সাতক্ষীরায়, ৫০০ কোটি টাকা বেচাবিক্রির আশা
সাতক্ষীরায় এবছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। গাছে গাছে দুলছে আম। কয়েকদিন পরেই বাজারে উঠতে শুরু করবে এসব আম। দেশের গন্ডি পেরিয়ে সাতক্ষীরার আমের সুনাম ছড়িয়েছে বিদেশেও। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে সাতক্ষীরার আম। এ বছর জেলায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা করছে কৃষি বিভাগ।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে আগেভাগেই আমগাছে মুকুল ধরে সাতক্ষীরায়। এছাড়া পরিপক্ক হওয়ার পর সারাদেশের মধ্যে প্রথম বাজারে আসে এ আম। আমের বাম্পার ফলনে খুশি বাগান মালিকরা। শেষ মুহূর্তে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বেশ লাভবান হবেন আমচাষীরা।
গাছ থেকে পরিপক্ক আম ভাঙার সরকারিভাবে দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে প্রশাসন। আগামী ১২ মে থেকে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ স্থানীয় জাতের আম, ২৫ মে থেকে হিমসাগর, ১ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আম্রপালি আম গাছ থেকে সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত তারিখের পূর্বে গাছ থেকে আম সংগ্রহ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ৬৫৫ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৭০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮৩৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৬০ হেক্টর জমিতে আম বাগান হয়েছে। সরকারি তালিকাভুক্ত আমবাগান রয়েছে ৫ হাজার ২৯৯টি ও চাষী রয়েছে ১৩ হাজার একশো জন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি ৫০ টাকা হিসেবে এসব আমের মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা।
এদিকে প্রতিবছর সাতক্ষীরা থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে সাতক্ষীরার আম। নবমবারের মত এসব আম রপ্তানি হবে ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডে। তবে এবছর কতটুকু আম রপ্তানি হবে সেটির কোনো পরিসংখ্যান হয়নি বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগ।
সাতক্ষীরা শহরের সরকারপাড়া এলাকার আম ব্যবসায়ী বিপ্লব ভট্টাচার্য। ৪০ বিঘা জমিতে আম রয়েছে এখন ব্যবসায়ীর। হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, মল্লিকা, গোবিন্দভোগ, গোপালভোগসহ বিভিন্ন জাতের আম।
আম ব্যবসায়ী বিপ্লব ভট্টাচার্য জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আমের ফলন ভালো। ঠিকমত বাজারজাত করতে পারলে ও সঠিক দাম পেলে এ বছর লোকসান কেটে যাবে। এখন দেশীয় জাতের বিভিন্ন আচার তৈরী করা টক আম বিক্রি করছি। প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৮০০ টাকায়। আমরা শহরের সুলতানপুর বড় বাজারে আড়তদারদের কাছে এই আম বিক্রি করি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আড়তদাররা আমাদের কম দাম দিয়ে বাইরে বেশী দামে বিক্রি করেন।
এছাড়া অনেক প্রতারক ব্যবসায়ী রয়েছেন জানিয়ে আম ব্যবসায়ী বিপ্লব ভট্টাচার্য জানান, অনেকে অপরিপক্ক আম কার্বাইড দিয়ে বাজারজাত করছে। এতে যারা কিনছে তারা প্রতারিত হচ্ছে। আবার দুয়েকটি গাছের আম, যেমন গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম এখন পরিপক্ক হয়ে পাকতে শুরু করেছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন বলছে, নিয়মিত অপরিপক্ক আম গাছ থেকে সংগ্রহ ও বাজারজাত করায় অভিযান করা হচ্ছে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলায় ৫৬ হাজার ৮৪০ কেজি অপরিপক্ক আম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে বিনষ্ট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের আম বাজারজাতকরণ সভায় নির্ধারিত সময়সীমার আগে কোনভাবেই কার্বাইড মিশ্রিত অপরিপক্ক আম কাউকে বাজারজাত করতে দেওয়া হবে না। নিয়মিত অভিযান চলছে। অনেক সময় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এমন অসাধু কর্মকান্ড পরিচালনা করেন কোন ব্যবসায়ী। অপরিপক্ক আম গাছ থেকে সংগ্রহ ও কার্বাইডের মিশ্রণ হচ্ছে, এমন তথ্য চোখে পড়লে তাৎক্ষণিক প্রশাসনকে অবহিত করার আহবান জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরায় এ বছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়ায় আমের মুকুল ও ফল এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকলে লাভবান হবে আমচাষীরা। অন্যদিকে, এবছর বিদেশে আম রপ্তানির বিষয়ে চূড়ান্ত হয়নি। তবে আম রপ্তানি কাজে সংশ্লিষ্টরা বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করছেন। গাছ থেকে আম সংগ্রহ শুরু হওয়ার পর কতটুকু আম রপ্তানি হবে সে বিষয়ে বলা যাবে।
তিনি বলেন, খসড়া হিসেবে প্রতি কেজি আমের মূল্য ৫০ টাকা হিসেবে উৎপাদিত আমের বাজারমূল্য ২২৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তবে উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার থেকে ২-৩ গুণ বেশি। সেই হিসেবে ধারণা করছি, এবছর সাতক্ষীরার আম বেচাবিক্রি হবে ৪০০-৫০০ কোটি টাকারও বেশি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, সাতক্ষীরার আমের সুনাম রয়েছে সারাদেশসহ বিদেশেও। কোনভাবেই সাতক্ষীরার আমের সুনাম নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। অসাধু বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ক আম নানাভাবে কেমিকেল মিশিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করছে। সেগুলো প্রশাসনিক তৎপরতায় নষ্ট করা হচ্ছে। আমের সুনাম ধরে রাখতে পরিপক্ক ও নিরাপদ আম যেন বাজারজাত হয় সে বিষয়ে সকল ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে।