সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক শিশুদের জন্য ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র’ প্রসারিত করার আহবান
নারীদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন স্থায়ীকরণে সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক শিশুদের জন্য 'শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র' প্রসারিত করতে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা আহবান করেছে 'উৎস বাংলাদেশ'।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ আহবান জানান বক্তারা।
সমাজের অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক শিশুদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয় পরিচালনার মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু করে 'উৎস বাংলাদেশ।' ৩০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক নারীদের কর্মসংস্থানে ধরে রাখতে তাদের শিশুদের জন্য 'শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র' সেবাদান শুরু করেছে সংস্থাটি। ২০১৬ সাল থেকে 'আস্থা' নামে রাজধানীতে চারটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র চলমান রয়েছে।
কমিউনিটির উদ্যোগে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা বিষয়ক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলদ্বীপ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সারা যাকেরের সভাপতিত্বে সভাটি পরিচালনা করেন উৎস বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির সদস্য শিপা হাফিজ।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মাহবুবা মাহমুদ। তিনি বলেন, 'স্থানীয় সম্পদ এবং জনগণ উন্নয়নের মূল শক্তি। সুস্থ জীবনের জন্য, শরীরের জন্য নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি সুস্থ রাষ্ট্রের, সমাজ এবং পরিবারের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন স্থানীয় সম্পদ এবং গণমানুষ- এই প্রত্যাশা নিয়ে উৎস বাংলাদেশ দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পথ চলছে। শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। এদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার মধ্যেই জাতি এবং সমাজের উন্নয়ন উৎকর্ষতা। প্রত্যেকেই এই বিষয়ে একমত যে, জাতি গঠনে শিশুদের সুন্দর করে গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।'
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, 'উৎস বাংলাদেশ' বর্তমানে একটি আবাসিক, একটি অনাবাসিক বিদ্যালয় ও চারটি শিশু দিবা যত্নকেন্দ্র পরিচালনা করছে। যেখানে ৫৯৫ জন শিশু সুযোগ পাচ্ছে। স্কুল ছাড়াও উৎস ক্যাটারিং বুটিক ও কৃষি কাজ পরিচালনা করে, যা কেবল প্রান্তিক ও বঞ্চিত নারীদের কর্মসংস্থান, শিশুদের আশ্রয় তৈরি করে এবং উৎসর জন্য তহবিল তৈরিতে সহায়তা করে। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে যৌনকর্মী, গামেন্টস কারখানা শ্রমিক, গৃহকর্মীর মতো কর্মজীবী মায়েদের সন্তানদের যথাযথ পূর্ণকালীন পরিচর্যা নিশ্চিত করতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা হয়।
মাহবুবা মাহমুদ বলেন, 'আমরা প্রতিটি শিশুর জন্য শিশুবান্ধব ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্ব গড়তে চাই। চাই এমন একটি সমাজ যেখানে এতিম বা দুস্থ শিশু হিসেবে নয়, সকল শিশু সম্মান নিয়ে আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নাগরিক হয়ে বড় হবে। আমি মনে করি করুণা নয়, অবজ্ঞা নয়, জনশক্তি হিসাবে পরিচয়- এটি আমাদের শ্লোগান হোক।'
এসময় সারা যাকের বলেন, 'সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করা শুধুমাত্র নৈতিক অবস্থান থেকেই নয় বরং জাতির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও অপরিহার্য।'
তিনি আরো বলেন, 'আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রতিটি শিশু উপযুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে এবং সবার যেন দিবাযত্ন কেন্দ্রের সুবিধা গ্রহণে সমান সুযোগ থাকে। তবে, একা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এটা নিশ্চিত করা সম্ভব না। শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করা একটি সম্মিলিত দায়িত্ব যার জন্য মা-বাবা, নীতিনির্ধারক ও সরকারসহ সমাজের সকলের সহযোগিতামূলক মনোভাব ও অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো এ বিষয়ে উদ্যোগী হলে অনেক শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা যাবে।'
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, 'আমাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যাতে করে সকল শিশুকে নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশে গড়ে তোলা যায়, যা একইসাথে যেমন তাদের সুস্থভাবে বড় হওয়া নিশ্চিত করবে, তেমনি দেশের জন্য তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে ভূমিকা রাখবে। তবে এজন্য দরকার কমিউনিটির সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ।'
শিপা হাফিজ বলেন, 'যেহেতু দরিদ্র কর্মজীবি মানুষকে জীবিকার জন্য ঘরের বাইরে যেতে হয় তাই শিশুরা খুব নাজুক অবস্থায় থাকে। মেধাবী এই শিশুরা আকর্ষিত হয় অপরাধজগতের মানুষ দ্বারা। তারা ধীরে ধীরে পাচার হয়, নেশায় অভ্যস্ত হয়। তারপর এই শিশুরা এই জগতের মানবশক্তি হিসেবে ঝরে পড়ে।'
সভায় আস্থার কার্যক্রম তুলে ধরেন উৎস বাংলাদেশের সদস্য সচিব শ্রাবন্তী দত্ত।