সেন্টমার্টিনে বৃষ্টি আর প্রবল ঝড়ো হাওয়া তাণ্ডব চালাচ্ছে
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজারের দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্টমার্টিনে আঘাত হেনেছে। দুপুর দেড়টা থেকে সেন্টমার্টিনে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে, সেই সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়েছে। রোববার (১৪ মে) সেন্টমার্টিনের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজির হোছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব তথ্য জানান।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে এখন পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে ৩ জন আহত হবার খবর পাওয়া গেছে।
নাজির হোছেন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে বাতাসের গতিবেগ তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ নিচ্ছে। অনেক স্থানে কাঁচা ঘর ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। সকালে বাতাস কম দেখে লোকজন আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেও, দুপুরের পরপরই আশ্রয় কেন্দ্র ও হোটেল-রিসোর্টে অবস্থান নিয়েছে হাজারো মানুষ। এই মুহূর্তে জনমনে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
এদিকে বাতাসের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে। স্থানীয়দের অনেকের সঙ্গেই মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যমতে সেন্টমার্টিনে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইছে। তবে এখন পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার উপকূলে ঝড়ো হাওয়ার মাত্রা বেড়েছে এবং সাগরও আগের চেয়ে বেশি উত্তাল।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলার ৬৩৬ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ২৮ হাজার ২৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তার মধ্যে সেন্টমার্টিনের ৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬০০০ জন অবস্থান করছে।
শাহপরী দ্বীপের বাসিন্দা জুবায়ের টিবিএসকে বলেন, দুপুর একটার পর থেকে ধীরে ধীরে বাতাস বাড়তে থাকে। এখন ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে।
সেন্টমার্টিনের ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইয়ামিন টিবিএসকে বলেন, মানুষ রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকলেও সকাল থেকে বাড়ি ফেরা শুরু করেছে। অনেকে গবাদি পশু গুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। মানুষ ঝড়ের চাইতে জলোচ্ছ্বাসকে বেশি ভয় পাচ্ছেন। কারণ এখানে দুই থেকে তিন ফুট জলোচ্ছ্বাস হলেই দ্বীপের অনেকটা তলিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, "দ্বীপে দুইতলা সাইক্লোন সেন্টারটির অবস্থা খুব নাজুক। সেখানে মানুষ যেতে চাইছে না। এছাড়া তিনতলা হাসপাতালেও বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারেনি। আবহাওয়া ভবনে বিজিবি এবং পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছে। দ্বীপের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে জেলা প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করলেও এর অধিকাংশই একতলা। জলোচ্ছ্বাস হলে দ্বীপে আটকে যাওয়া বিপুল মানুষকে আশ্রয় দেওয়া কঠিন হবে।"
উদয়-অস্ত রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'দ্বীপে প্রায় ২২০টি রিসোর্ট রয়েছে। সবগুলো রিসোর্টেই মানুষকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় পুরো সেন্টমার্টিন এক কোমর পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলো। ফলে ক্ষতির শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।'
কক্সবাজার আঞ্চলিক আবহাওয়া কার্যালয়ের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ৭ মিলিমিটার সেন্টমান্টিনে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার পর বৃষ্টি বাড়তে পারে।
এর আগে আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, সুপারসাইক্লোনের প্রথম ও সবচেয়ে শক্তিশালী ধাক্কা সেন্টমার্টিন দ্বীপে আঘাত হানবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের গড় উচ্চতা মাত্র ৩.৬ মিটার এবং ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চ জোয়ারের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিনে ১০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে।